‘মাদক, সন্ত্রাস মুক্ত সমাজ গড়ার’ আহ্বান জানিয়ে ডাকা সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানোর পরও প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত না হওয়ায় ক্ষোভ ঝেরেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘সাবধান’ করে বলেছেন, ‘রাত বারোটার সময়ও সাড়ে চার, পাঁচ লাখ লোক নামানোর ক্ষমতা শামীম ওসমান রাখে। তা আমরা দেখিয়েছি কয়েকদিন আগে। (লোকজন রাস্তায়) নামার পর যদি আমরা বলি, জনগণ যদি বলে, আমরা কাউকে এখানে চাই না, তাহলে কিন্তু এইখানে থাকার কারও উপায় নাই। এই কথাও মাথায় রাখবেন কিন্তু। আগের মেজাজ থাকলে এখনই বলে দিতাম। এখন বয়স হয়েছে ৬২, তাই ৬২ হিসেবে বক্তব্য দিলাম, ২৬ বানাইয়া দিয়েন না কিন্তু। সাবধান থাকবেন সবাই।’
শনিবার(২৭ জানুয়ারী) বিকেলে নগরীর ইসদাইর এলাকায় ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন। শামীম ওসমানের ডাকা এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি।
এই সময় তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবন প্রায় ৪৫ বছর হতে চললো। আমি কখনও এমন বিব্রতবোধ কখনও করি নাই। বিশেষ করে সাংবাদিক সমাজ, আইনজীবী, আওয়ামী লীগের সবাই মিলে আমার কাছে একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। আমি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এই বিষয়টা (সমাবেশের ব্যাপারে) জানিয়েছি বহু আগেই। আমি আমার ছোটবোন মেয়রের মতো করে বলতে পারবো না যে, এখানে প্রশাসন টাকা কামাতে আসে। আমি এইভাবে কথাটা বলতে চাই না।
‘কিন্তু আপনারা প্রশ্ন করেছেন, আমি জেলা প্রশাসককে বলেছি কিনা, আমি একবার বলি নাই, বারবার বলেছি। আপনারা জেনে অবাক হবেন, কেবিনেট সেক্রেটারি, প্রধানমন্ত্রীর সচিব, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীগণ আমাকে এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন। সেই কারণে, ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সিতে একটা সংসদ সদস্য কোন জায়গায় থাকে এইটা হয়তো নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের অনেকেই বুঝতে পারেন নাই’, যোগ করেন তিনি।
নির্বাচনের আগে প্রশাসনের কোন কর্মকর্তার কাছে তিনি ফোন করেননি জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে যারা আছেন, তাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমার নাম শামীম ওসমান। আমি কারও দয়ায় চলি না কিন্তু। আমি কারও দয়া-দাক্ষিণ্যে চলার মতো লোক না। আমি রাজপথ থেকে সৃষ্টি হওয়া মানুষ আমি রাজপথেই শেষ হবো।’
সমাবেশে উপস্থিত না থাকার ব্যাপারটি সংসদে উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইবেন বলে জানান এই সংসদ সদস্য। একই প্রশ্ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রীর কাছে রাখবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনে যারা একজনকেও এইখানে আসতে দেন নাই বা আসেন নাই কেন, এই প্রশ্ন যদি এইখানে করি তাহলে ভাববেন নারায়ণগঞ্জে করেছি। আমি শামীম ওসমান সম্বন্ধে ধারণা আপনাদের অনেক কম। পার্লামেন্টের অধিবেশনে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করবো, যারা জনগণের সেবক হিসেবে, জনগণের চাকরি করে এই নারায়ণগঞ্জে এসেছেন, তারা আজকে অনুপস্থিত কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাথা নোয়াবার মানুষ আমি না। এমন কোন কাজ করি না যে, আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবো। অনেকেই অনেক কিছু করেন, আমরা সব দেখি। টাকা ধরা পড়ে যাত্রাবাড়িতে আর কেস দেখান ফতুল্লাতে। আমাদের কাছে অনেক খবরই আছে, সাংবাদিকরা আমাদের জানান কিন্তু।’
‘এই কথাগুলো আজকে বলার কথা না। আমার চেয়ারম্যান-মেম্বার-কাউন্সিলর সবাই হতাশ হয়ে গেছেন। হতাশ হবেন না, এইটা আমাদের নারায়ণগঞ্জ, আমরাই ঠিক করবো। আমাদের সরকারপ্রধান জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা। উনিও যেমন পৃথিবীর কোন শক্তির কাছে মাথানত করেন না, আমরাও তার কর্মী কোন শক্তির কাছে মাথানত করার লোক না। আমাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নারায়ণগঞ্জে অনেকেই সুযোগ নিয়ে চলে যাচ্ছে।’ মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা নির্মূলে জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে দ্রুত গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করার জন্য নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবকে অনুরোধ জানান তিনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। এই সময় বিভিন্ন পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।