নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন বি. আই.ডব্লিউ.টি. এ পোর্ট এরিয়াস্থ ঐতিহ্যবাহী পাইকারি ৩ নং মাছ ঘাট দীর্ঘ দুইশ বছরের পুরনো মাছ ঘাটের ব্যবসায়ীদের পূনর্বাসনের দাবীতে ভেকু’কে ঘিরে মাছ ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন। এ মানববন্ধনকে সমর্থন জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণ।
রবিবার ( ১৭ মার্চ )সকালে নারায়ণগঞ্জ বি.আই.ডব্লিউ. টি. এ নদী বন্দর ৪-৫ নং মধ্যবর্তী মাছ ঘাট পয়েন্টের বৈধ আড়ৎদার ও ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরা সম্মিলিতভাবে এ মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে মাছ ব্যবসায়ী মো.নবী হোসেন বলেন, আমার দাদা, বাবা ও চাচারা এ ঘাটে মাছ ব্যবসা করে আসকেছি। আমাদের যদি এখান থেকে তুলতে হয় তাহলে আমাদের ক্ষতিপুরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে না হয় আন্দোলন করে মরতে রাজি আছি।
মাছ ব্যবসায়ী রঞ্জিত চন্দ্র প্রধান বলেন, আমরা পূর্বপুরুষ থেকে নারায়ণগঞ্জে ২শত বছর যাবত মাছ ব্যবসা করে যাচ্ছি। তাই এ মাছ ঘাটটা নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্য। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণে আমাদের কোন বাধা বা আপত্তি নাই। এঘাটে আমাদের ব্যবসায়ী সহ হাজার হাজার শ্রমীক এখানে কর্মরত রয়েছে। বি.আই.ডব্লিউ. টিএ’র অনেক পরিত্যাক্ত জায়গা রয়েছে সেখানে আমাদের মাছ ব্যবসায়ীদের জন পুর্নবাসন করে ক্ষতিপুরণ দেওয়া হউক। যাতে করে ঐতিহ্যবাহী ঘাটটা ধরে রেখে আমরা ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল- ভাত খেয়ে বাচতে পারি। তাদের কাজ করতে আমাদের বাধা নাই।
ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী জানান, ১৯৭২ সাল থেকে আমরা এ ঘাটে ব্যবসা করি। আমাদের ৩/৪ পুরুষ চলে গেছে এঘাটের সাথে। আমাদের পুর্নবাসন না দিলে আমরা জীবন দিয়ে দিব। তারা বলছে আমাদের নাকি ক্ষতিপুরণ দিয়েছে কিন্তু এধরণের ক্ষতিপুরণ আমরা পাই নাই। সেটা পেয়েছে বন্দর ঘাট ফল ব্যবসায়ীরা।
৩নং মাছ ঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিঃ সাধারণ সম্পাদক মো. ছনি বলেন, এ ঘাট দুশত বছরে পুরনো আমাদের পুরুষের পর পরুষ চলে গেছে এঘাটে । এবং জেলে ও মহাজনকে কোটি কোটি টাকা আমরা দাদন দিয়ে এখানে ব্যবসা করে আসছি। আমরা ১৯৬৬ সাল থেকে বি.আই.ডব্লিউ. টিএ এ মাছ ঘাটকে ইজারা দেওয়া শুরু করে। তারা ইজারা দিয়ে আমাদের বৈধতা দিয়ে গিয়েছে। আমরা সরকারকে সরকারকে ভেট, ট্যাক্স,ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে এখানে যুগের পর যুগ ধরে ব্যবসা করে আসছি। আমরা কোন অবৈধ ভাবে এখানে ব্যাবসা করছিনা।আমাদের পুর্ণবাসনা না হলে দাদনের কোটি কোটি টাকা হারাইতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী মাছ ঘাটকে রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ বাসী ও এগিয়ে আসবে।
ইজারাদার শিবলি মাহমুদ বলেন,মূলত বিআইডব্লিউটিএ
এ মাছ ঘাট ইজারা নিয়েছে বন্দর বিভাগ থেকে। তিন মাস যাবত এখন শুনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিআরডব্লিটটি পি-১ প্রকল্পের একটি টার্মিনাল করবে। কিন্তু সীমানা নির্ধারণে কতৃ পক্ষ আমাদের সাথে কোন আলোচনা না করে বিআরডব্লিটটি পি-১ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এবং আমি যেখান থেকে ঘাট ইজারা নিয়েছি সেখান থেকে এপর্যন্ত কোন নোটিশ দেওয়া হয় নাই। ইজারা কৃত সীমানায় বিআরডব্লিটটি পি-১ প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে আমাদের ক্ষতিপুরণ দেওয়ার কথা। আমরা ক্ষতিপুরণ পাশা-পাশি পুর্ণবাসনা চাই। নয়ত এতে করে আমাদের ব্যবসায়ীরা ক্ষতি সাধন হবে।
এর আগে রেজিন নং ২১৫, ৩ নং মাছ ঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিঃ নিজস্ব পেইড হইতে চলতি বছরে ২২ ফেব্রুয়ারী বিআইডব্লিউ টি এ প্রধান কার্যালয় মতিঝিল ঢাকায় লিখিতি অভিযোগে সারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রনাধীন ঘাটি ৪-৫ এর মধ্যবর্তী মাছ য্যাটে বিআরডব্লিটটি পি-১ প্রকল্পের নামে অভিযোগ ও সমাধান চাহিয়া আবেদন করা হয়।
আবেদনে উল্লেখ্য করেন, আমরা বিআইডব্লিউ টিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের ৪-৫ নং মাছ ঘাট পয়েন্টের বৈধ আড়ৎদার ও ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী। আমরা দীর্ঘ ৬০ বছর যাবৎ এই ঘাট পয়েন্টের সরকারী সকল নিয়ম মানিয়া ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমাদের এই মাছ ঘাট নারায়ণঞ্জ ঐতিহাসিক মাছ ঘাট নামে পরিচিত, যেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ ও আশে পাশের জেলায় মাছের চাহিদা পূরন করে আসছে, বিগত প্রায় ২০০ বছর যাবৎ কাল। এই মাছ ঘাটে সমগ্র বাংলাদেশ হইতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নদী পথে এবং স্থল পথে এসে থাকে। আমাদের পূর্ব পুরুষগণ এই মাছ ঘাটের ঐতিহ্য এবং সুনাম ধরে রাখার জন্য ব্যবসায়ীক পরিধি বৃদ্ধি করে থাকলেও বর্তমানে এই ঘাট ধ্বংসের মুখে, যা কোন ভাবেই কাম্য নয়, পূর্বে এই ঘাটের মাছ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনা করার জায়গা বেশি ছিলো। বতর্মানে মাত্র ৫৫০ ফুট লম্বালম্বি ভাবে জায়গা দেওয়া হলেও সেখান থেকে ৪১০ ফুট জায়গা বিআরডব্লিউটি পি- ১ প্রকল্প দখল করে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই প্রকল্প থেকে বলা হয়েছিল ২৭০ ফুট জায়গা নিবে এবং উক্ত জায়গায় যারা ব্যবসা পরিচালনা করত তাদের তালিকা দেওয়ার জন্য তারা কোন ক্ষতি পূরণ না দিয়েই আমাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বলছে। বর্তমানে ৪১০ ফুট জায়গায় ২০০ জনের ও বেশি লোকের কর্মস্থান। আমাদের পূর্নবাসন সহ ক্ষতিপূরন না দিলে আমাদের এত গুলো পরিবার ভীষনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের বিআইডব্লিউ টিএ পোর্ট অফিসার শহিদুল্লা বলেন, মূলত এ বিআরডব্লিউটি পি- ১ প্রকল্প আমাদের দায়িত্বে না। আর এ প্রকল্পের সাথে আমাদের সম্পক নাই। আমরা জানতে পারি তাদের কিছু লোক ক্ষতিপুরণ পেয়েছে কিছু লোক পায়নাই। আর এটা বিশ্বব্যাংক অর্থয়ানে যেহেতুক বিআরডব্লিউটি পি- ১ প্রকল্প তারা বলতে পারবে। যেহেতুক আমাদের আন্ডারে ইজারা হয়েছে তাই আমাদের ডিপার্টমেন্ট এবিষয়ে জানানো হয়েছে।