বিএনপি – জামায়াতেরর নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে গড়েতুলেছিলেন পিতা ও পুত্রের অনুশারীরা। তাদের নিয়েই সারা বছর থাকে আলোচনা সমালোচনা। আওয়ামীলীগের অনেক শীর্ষ নেতাই তাদের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে কিংবা ঘরোয়া সভায় ক্লেশ প্রকাশ করেন। পক্ষান্তরে নিজেদেরকে সাহসী আর রাজপথে থাকার প্রতিজ্ঞা নেন। কিন্তু দলের ও সরকারের দুঃসময়ে সেই সমালোচনার শিকার যারা, তাদেরকেই দেখা যায়, তাদেরই দেখা মিলে লড়াইয়ে। আর বড় বড় বুলি আওড়ানো নেতারা জনসম্মুখে আসেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে। করেন ফটোসেশন আর কাঁদেন মায়া কান্না। এই সমালোচনার শিকার যারা, তারাই হলেন ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবার পন্থী- রা। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের মূল বা কট্টর ধারার ধারক বাহক বলা হয়ে থাকে তাদেরকেই।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নাশকতা আর তান্ডবে আবারো এই ওসমানপন্থীরাই নিজেদের সেই সুনামের প্রমাণ রেখেছেন, স্বাক্ষর রেখেছেন। এদিকে এবারের ঘটনায় সমালোচনা কারীদের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তৃনমূল কর্মী সমর্থকরা।
বিশেষ করে তান্ডবে মাঠে না থাকা কিংবা নেতাকর্মীদের কোন দিক নির্দেশনা তো দূরে থাক, নূণ্যতম যোগাযোগ না করা নেতারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর মাঠে নামায় তাদের প্রতি রীতিমত ঘৃনা প্রকাশ করছেন কর্মী সমর্থকরা। উপরন্তু মরার উপর খাড়া ঘা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে আগুন দেয়ার ঘটনায় সিটি কর্পোরেশনের দায়ের করা মামলাটি। ঐ ঘটনার সাথে বিএনপি জামাতের দুর্বৃত্তরা জড়িত থাকলেও মামলায় জেলা, মহানগর কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ের কোন বিএনপি বা জামাত কর্মীর নাম দেখা যায়নি আসামী তালিকায়। উল্টো নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা জ্জ জনের নাম আসামি তালিকায় থাকায় এই ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে। তাছাড়া ঘটনার বিষয়ে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মুখ থেকে বিএনপি জামাতের বিরুদ্ধে একটি শব্দও বের না হওয়ায় ক্ষুব্ধ কর্মীরা বলছেন, নৌকার মেয়র এবার নিজের রঙ দেখিয়েছেন প্রকাশ্যে। তার বিএনপি-জামাত প্রীতির প্রমাণ তিনি নিজেই দিলেন এই ঘটনায়। তারা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সামনে নিজেকে রাজনীতিতে আনফিট দাবী করে সে উক্তি উনি করেছেন তা আসলেহ সত্য। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মীরা বলছেন, তিনি অর্ধ সত্য বলেছেন। আসলে তিনি রাজনীতিতে আনফিট হলেও বিভেদ আর সুবিধা ভোগের রাজনীতিতে তিনি ফিটেস্ট।
জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ডাকা শাট ডাউন কর্মসুচীর দিনই মাঠে নামে ইসলামী ছাত্র শিবিরের শত শত পুরুষ ও নারী কর্মীরা। ঐদিন তাদের সাথে যোগ দেয় ইসলামী আন্দোলনের ছাত্র সংগঠনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। পুলিশের সাথে ত্রিমুখি সংঘর্ষ চলে বিকাল পর্যন্ত। এদিনই প্রথম এই নাশকতার বিরুদ্ধে অয়ন ওসমানের নির্দেশে মাঠে নামে ছাত্রলীগ।
পরের দিন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বিএনপি ও শিবিরের একটি যৌথ মিছিল বের হয়ে নগরীরর প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু রোড অবরোধের চেষ্টাসহ বিভিন্ন মার্কেটে লুটপাটের চেষ্টা চলে। শহরে নাশকতা ঠেকাতে নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামেন আওয়ামীলীগের এমপি শামীম ওসমান। এসময় শামীম ওসমানকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা ককটেল ও গুলি ছুড়লে শুরু হয় সংঘর্ষ। শামীম ওসমান নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে নেতাকর্মীদের নিয়ে টহল শুরু করেন। এসময় ডিআইটি ও নয়ামাটি এলাকায় কয়েকশ নাশকতাকারী ফের ককটেল ও গুলি বর্ষন শুরু করলে সংঘর্ষ চরম আকার ধারন করে। এক পর্যায়ে শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের নিয়ে পাল্টা ধাওয়া দিলে নাশকতাকারীরা পিছু হটে। এরপর শামীম ওসমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় পৌছালে সেখানেও শত শত নাশকতাকারীরা পিছু হটে। এসময় শামীম ওসমান ভাংচুর করা ও আগুন ‘দেয়া দলীয় অফিস পরিদর্শন করেন। শামীম ওসমান সন্ধ্যায় নেতাকর্মীদের- নিয়ে ফতুল্লার বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকাতে টহল দেন। পরে শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের নিয়ে রাতভর শহরে অবস্থান করায় চোরাগুপ্তা হামলা শুরু করে নাশকতাকারীরা।
লিংক রোড ও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে তান্ডবকারীদের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় লিংক রোডের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশে মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম উদ্দিনের মালিকানাধীন ‘নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্ক’, শামীম ওসমানের ব্যবসায়ীক অংশীদ্বারীত্বে চলা শীতল এসি বাস ট্রান্সপোর্টের ২৬টি বাস, এসবি নীট নামে বহুতল রপ্তানীমুখি গার্মেন্টসহ প্রায় ২০টি যান বাহন। রাতে নাশকতাকারীরা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে আগুন দিলে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আব্দুল করিম বাবু তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু জানান, আমি নগর ভবনে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে সেখানে যাই এবং নাশকতাকারীদের রুখে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকি। এক পর্যায়ে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানকে ফোন করে নেতাকর্মীদের আসতে বললে তারা দ্রুত সেখানে আসলে নাশকতাকারীরা পালিয়ে যায় এবং সেখান থেকে কয়েকজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করি।
দলের তৃনমূল কর্মী সমর্থকরা জানান, পরিতাপের বিষয় শামীম ওসমান দ্রুত নেতাকর্মীদের না পাঠালে পুরো নগর ভবনই জ্বালিয়ে দিত ওরা। কিন্তু আমাদের নৌকার মেয়রকেও রাস্তায় নামতে দেখলাম না। এমনকি গণমাধ্যমে তার মুখ দিয়ে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধেও কোন শব্দ উচ্চারণ করতে শুনিনি। অথচ শামীম ওসমানের সাথে তার ছেলে, শ্যালক, ছেলের শ্বশুড়বাড়ীর লোকেরা পর্যন্ত লড়াইয়ে নেমেছিল। নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এক শামীম ওসমান আর তার নেতাকর্মীরা ছাড়া কোথাও কেউ নেই।