প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ক্ষমতাচ্যুত হলোও
নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমানের সহযোগী দেলোয়ার হোসেন দেলু ওরপে ল্যাপটপ ও অয়ন ওসমানের অন্যতম সহযোগী শান্তার চাচা শাহাদাত হোসেন লিটন সিটি বন্ধন পরিবহনের মালিকদেরকে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর নিয়ে বনে গেছেন চেয়ারম্যান আর এমডি। এখন সিটি বন্ধন পরিবহন মালিকেরা তাদের চাঁদাবাজি ও দখল বাজির অত্যাচার অতিষ্টিত হয়ে পড়েছে।
তথ্য সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে সাবেক এমপি শামীম ওসমানের সহযোগী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সিটি বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান ভাগিনা জুয়েল হোসেন ও এমডি পরিবহন মাফিয়া আইয়ুব আলীও নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়। আর এই সুযোগে বন্ধন পরিবহনের মালিকদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জিম্মি করে দলের নাম ভাঙিয়ে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর নিয়ে অয়ন ওসমানের অন্যতম সহযোগী শান্তার চাচা লিটন বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান ও আজমেরী ওসমানের সহযোগী দেলু বনে যান এমডি।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের আগে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে বন্ধন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতেন বিএনপি নেতা মাহাবুব উল্লাহ তপন। ওই নির্বাচনের পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম চেঙ্গিস বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নেন। এরপর ২০১৪ সালের পর শামীম ওসমান এমপি হলে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদলের মাধ্যমে বন্ধন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করেন পরিবহন মাফিয়া আইয়ুব আলী। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মহানগর সাবেক এমপি শামীম ওসমানের আশির্বাদে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ভাগিনা জুয়েল বন্ধন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করে বনে যান চেয়ারম্যান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র – জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে শামীম ওসমানসহ তার সহযোগীরা নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
আর জানাগেছে, দেলু আজমেরী ওসমানের নাম বিক্রি করে দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জড়িত ছিল। আর লিটন তার ভাতিজা শান্তাকে দিয়ে অয়ন ওসমানের মাধ্যমে পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের অত্যাচারে সিটি বন্ধন পরিবহনের সাধারণ মালিকরা অতিষ্ঠ।
শুধু তাই না তারা গত ৫ আগস্ট ছাত্র – জনতার আন্দোলনে সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের সঙ্গে গাড়িবহর নিয়ে শহরে মহড়া দিয়েছিল। এবং ছাত্র – জনতার উপর গুলি চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে বিএনপি নেতা মাহবুব উল্লাহ তপনের ব্যক্তিগত সহকারী রাসেল নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার জিডি নং – ৭৬১।
অভিযোগে উল্লেখ করেন – ঢাকা রোডে সিটি বন্ধন পরিবহন যাহার রেজিঃ নং- ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-১৫৭৩ এই গাড়িটির পরিচালনা করিয়া আসিতেছি। উক্ত মোঃ মাহাবুবুল্লাহ (তপন) গত প্রায় ১০ (দশ) বৎসর পূর্বে রাজনৈতিক বিভিন্ন সমস্যার কারনে গাড়িটি আমাকে পরিচালনার দায়ি বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবং গাড়ির প্রকৃত মালিক গাড়ির দায়িত্ব বুঝিয়া নেওয়ায় সিটি বন্ধন পরিবহন উক্ত বিবাদীদ্বয় গাড়িটি বন্ধ করিয়া দেয়। গত ১০ আগস্ট সকাল এগারোটার দেলোয়ার হোসেন দেলু ও শাহাদাত হোসেন লিটন আমাকে ডাকাইয়া নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাধীন ১নং রেল গেইটস্থ সিটি বন্ধন মালিক সমিতির অফিস রুমে নিয়া গেলে সেখানে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে এবং আমি স্বাক্ষর দিতে না চাইলে বিবাদীদ্বয় আমাকে নানা ধরনের ভয়-ভীতি হুমকি প্রদান।
এছাড়াও ঐ খানকার বাস মালিক ও শ্রমিকরা জানান, দ্বিতীয়বার আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শামীম ওসমানের নির্দেশে এ সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ বাহিনীর দ্বারায় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্টান দখল করে। মাহবুব উল্লাহ তপনকে ৮ টি বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়। এবং তার গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন বাস মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করতেন তারা। তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে অনেকেই অতিষ্ঠ। তাই এ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের জোড় হস্থক্ষেপ কামনা করছি।