এক বছর সাত মাস পূর্বে অদুদ খন্দকার নামের একজনের মৃত্যুর ঘটনায় ২৮ আগস্ট বুধবার বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মারা যাওয়া অদুদ খন্দকারের ভাই জাহিদ খন্দকার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। উক্ত মামলায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি নেতাকর্মী সহ একজন সাংবাদিককেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার আসামীরা হলো, জেলা পরিষদ সদস্য মাসুম আহম্মেদ (৫০), মানবজমিন পত্রিকার বন্দর প্রতিনিধি নুরুজ্জামান (৪৮), ধামগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার শফিউদ্দিন মুক্তার হোসেন (৪০), মোঃ রাসেল (৪৪), মোঃ হাতেম (৫৫), আজিজ দেওয়ান ভেন্ডার (৪৫), মোঃ সোহেল (৩২), জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু (৬০), ) মিজানুর রহমান (৪০) সহ ১০/১২ জন অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়, মামলার বাদী জাহিদুল খন্দকার ও তার ভাই মাসুদ রানা বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিগত ২০২২ সালে ৩ ডিসেম্বর রাত ১টায় অদুদ খন্দকার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়ে। সে সময় মাসুম আহম্মেদ এর নেতৃত্বে উল্লেখিত আসামীরা আগ্নোয়ান্ত্র ও দেশী অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়ীতে অনাধিকার প্রবেশ করিয়া মামলার বাদী জাহিদুল খন্দকার এবং তার বড় ভাই মাসুদ খন্দকার কে খোঁজাখুজি করতে থাকে। তাদের না পেয়ে অদুদ খন্দকার-কে তার ঘর থেকে টেনে হিচড়ে বাইরে এনে চোখ বেধে টোটাল ফ্যাসন লিঃ এর বালুর মাঠে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছে জাহিদুল ও মাসুদ রানার অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। অবস্থান জানাতে না চাইলে মাসুম আহম্মেদ এর নির্দেশে শফিউদ্দিন মেম্বার অদুদ খন্দকারের দুই হাত পিছনের দিকে ধরে রাখে এ সময়ে নুরুজ্জামান তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে তার বাম পায়ের গোড়ালীর উপরের দিকে কোপ দিয়ে গুরুতর কাটা মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে আর মোঃ হাতেম তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে গোড়ালীর চামড়া সহ মাংস কেটে নেয়। এ ঘটনা তারা দুই ভাই জাহিদুল এবং মাসুদ রানা দূরে দাড়িয়ে দেখতে পায়। এরপর তার ভাইয়ের দুই তিনদিন খোজ না পায়নি। পরবর্তীতে তারা জানতে পারে তাই ভাইকে বন্দর থানার (১১)২০২২ মামলায় অজ্ঞাত আসামী হিসেবে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। জেল হাজাতে সে চিকিৎসাধীন ছিল। পরবর্তীতে সে ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারী জামিনে বেরিয়ে আসে। এ সময় তিনি গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে মদনপুর বারাকা হাসপাতাল পরবর্তীতে সোরওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারী সে মারা যায়। মামলার এজাহারের সাথে তারা ওই সময় মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কপি সংযুক্ত করেছেন।
তবে গত ১২ জানুয়ারী ২০২৩ সালে মানবজমিনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে মামলার এজাহারের সাথে সংবাদের বিস্তর ব্যবধান লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে গত বছরের ৩রা ডিসেম্বর রাতে নিজ বাড়ি থেকে অদুদ খন্দকারকে তুলে নিয়ে যায় বন্দর থানা পুলিশ। নাসিক ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল। নিহত ওয়াদুদের দুই ভাই মাসুদ রানা ও জাহিদ খন্দকার যুবদলের সক্রিয় কর্মী। তাদের বাড়িতে না পেয়ে ওয়াদুদকে পুলিশ ধরে নিয়েছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
নিহতের স্ত্রী তানজিলা বেগম জানান, ২০২২ সালের ৩রা ডিসেম্বর রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে বন্দর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী সঙ্গীয় ফোর্সসহ আমার স্বামীকে ঘুম থেকে তুলে কথা আছে বলে থানায় নিয়ে যায়। থানায় আমার স্বামীর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরদিন নারায়ণগঞ্জ কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কারাগারে থাকাবস্থায় আঘাতপ্রাপ্ত পায়ে পচনসহ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এক সপ্তায় নারায়ণগঞ্জ কারাগারে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। অসুস্থ বলে নিম্ন আদালতে বহুবার জামিন চাওয়া হয়েছে। অবশেষে ২রা জানুয়ারি জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে প্রথমে স্থানীয় বারাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে চিকিৎকের পরামর্শে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। আইসিইউতে এক সপ্তাহ রাখার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে তার মৃত্যু হয়।
ওই সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই সাইফুল আলম পাটোয়ারী মানবজমিনকে জানিয়ে ছিলেন, মৃত্যু হোক কোনো আসামির বেলায় কাম্য নয়। তবে তাকে কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিনা তা তদন্তের পর বলা যাবে। প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে কামতাল তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় পাঠান। পরে ওয়াদুদকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল।
২৯ আগস্ট দায়ের হওয়া মামলার ব্যাপারে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে মামলার আসামী হওয়া মানবজমিন পত্রিকার বন্দর প্রতিনিধির প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে যা পত্রিকায় প্রকাশ যোগ্য নয়।