নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লায় মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু হত্যাকান্ডের ঘটনায় করা মামলায় সারিদ হোসেন, প্রেরণা, নূর আলম, কাজল ও পুতুল নামে পাঁচ আসামীকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
রবিবার(১ সেপ্টেম্বর ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার আলম এর আদালত রিমান্ড শুনানি শেষে মহানগর যুবদলের আনোয়ার হোসেন আনুর হত্যা মামলার আসামী সারিদ হোসেন, নূর আলম,কাজলকে ২ দিন ও নিহতের মেয়ে প্রেরণা – পুতুলকে এক দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত জিআরপি পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে আসামীকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেট মামলার সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে আসামী সারিদ হোসেন, নূর আলম,কাজলকে ২ দিন ও নিহতের মেয়ে প্রেরণা সহ পুতুলকে এক দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত হাজতী আসামী-দেওভোগ এলাকার ও এ/পি-কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ সংলগ্ন মাসদাইর আদর্শ স্কুল রোড (হেলেনা কটেজ এর ৯ম তলার সংখ্য উৎপাটন ভাড়াটিয়া), নিহতে মেয়ে জান্নাত আরা জাহান প্রেরনা (২৩) ও ছেলে সারিদ হোসেন (২০), বাবুরাইল মৃত, করিম মিয়ার সন্তান নুর আলম (৪৬), কাজল (৩৫), রোকসানা আক্তার পুতুল।
উল্লেখ্য, নিহত মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু (৪৮) এবং সে পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও যুবদলের নেতা ছিল। গত সোমবার ২৬ আগস্ট দুপুরে ছোট ভাই আনুর মেয়ে আমার আরেক ভাতিজির কাছে ফোন করে জানায় ওর বাবাকে পাওয়া যাচ্ছেনা, পরমূহূর্তে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে থাকি, কোথাও তার কোন খবর মিলেনি। ঠিক বিকেল ৫ টার সময় মাসদাইর ঈদগাহ সংলগ্ন হেলেনা কটেজ এর দশ তলা বিল্ডিংয়ের লিফটের কোর জায়গায় আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনুর লাশ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। একী ভবনে তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতো। আমরা আশঙ্কা করতেছি তার ছেলে মেয়ে ওর মা এবং তার বর্তমান স্বামী রাসেল এর সাথে যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটায়। রাসেল অতীতে অনেকবার আনোয়ার হোসেন আনুকে মারার চেষ্টা করে যা কোনভাবে সফল হয়নি। রাসেল আমাদের সম্পর্কে ভাতিজা হয়, আমার জেটাতো ভাইয়ের ছেলে। রাসেলের সাথে তার স্ত্রীর পরকিয়ার সম্পক জানতে পারার পর থেকে আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনু তাকে বাড়িতে আসতে বারণ করে কিন্তু রাসেল বিভিন্ন উপায়ে তার স্ত্রী পান্নার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখে আর এ বিষয়টি একপর্যায়ে পারিবারীক ভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। দেওভোগের বাড়িতে বসবাসের কারনে স্ত্রী পান্না রাসেলের সাথে সহজেই মেলামেশা করতে না পারার কারনে সে স্বামীকে অন্যত্র বাসা নিতে চাপ প্রয়োগ করে। স্বামী আনোয়ার হোসেন পত্রিক ভিটা ছেড়ে মাসদাইর একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিতে বাধ্য হয় এবং সেখানে তার অনুপস্থিতীতে তার ছেলে মেয়ের সহযোগিতায় রাসেল বিভিন্ন সময় যাওয়া আসা করতে থাকে।
নিহত আনোয়ারের ফ্ল্যাটে রাসেলের যাওয়া আসার খবর জানতে পারার পর তার স্ত্রীকে রাগচাপ দিলে সে আনোয়ার হোসেনকে মারার জন্য ২০১৯ সাল জানুয়ারীর ২তারিখে আমলা পাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে রাসেলের সাথে দেখা করে, আর এই খবর আনোয়ার জানতে পেরে সাথে সাথে সে তার বন্ধু বান্ধব নিয়ে আমলা পাড়া ছুটে যায় এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় তাদের দুজনকে হাতেনাতে ধরে। ধরার পর পান্না ও রাসেল উভয়েই হাত জোড় করে ক্ষমা চায় আর ওয়াদা করে তারা আজকের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না। কিন্তু তারপরেও তারা অবৈধ যোগাযোগ বজায় রাখে। স্মারকলিপিতে আরোও বলা হয়,এ বিষয় নিয়ে পারিবারীকভাবে অশান্তি দেখা দিলে স্ত্রী পান্না পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় আনোয়ার হোসেন আনুকে ২০২০ সালের ৩০শে জুন তালাক নোটিশ পাঠায়। এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েকে তার বাবার কাছে রেখেই ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাসেলের সাথে বিবাহ কাজ সম্পন্ন করে। মায়ের প্ররোচনায় ছেলে মেয়েও বাবার সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করতে থাকে, এমন কি মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ে বাবার গায়ে হাত তুলতো, কিন্তু আমার ছোট ভাই লজ্জায় কাউকে কিছু বলতো না। ওরা প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে নাস্তানাবুদ করে রাখতো। আমরা পারিবারীকভাবে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি এই নৃশংস হত্যাকান্ড তার দুই সন্তান, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পান্না ও পান্নার বর্তমান স্বামী রাসেল ঘটিয়েছে। এই রহস্যজনক হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনি সহায়তা পেতে আমরা ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করি।
মামলার পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে জানান, আনোয়ারের মৃতদেহ উদ্ধার করে নারায়নগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতের মর্গে প্রেরন হয়
পরে এঘটনায় নিহতের পরিবার ফতুল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করিলে পুলিশ সন্দেহভাজন পাঁচ জনকে আটক করে।