নারায়ণগঞ্জে আলোচিত মহানগর যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন আনু হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামী ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব, ঝুট সন্ত্রাসী রাসেল মাহমুদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শুক্রবার ( নভেম্বর) বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বীথির আদালত শুনানী শেষে রাসেল মাহমুদের ২দিন ও তার স্ত্রী পাপিয়া আক্তার পান্নার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরআগে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআই জানায়, গত ২৬ আগস্ট শহরের মাসদাইর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম পাশে হেলেনা সেঞ্চুরি এ্যাপার্টমেন্টের লিফটের ফাঁকা জায়গার নীচতলা থেকে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন আনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। সংবাদ পেয়ে পিবিআই ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত জব্দ সহ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত আসামীদের সনাক্ত করণ কার্যক্রম শুর করে। নিহত বিএনপি নেতা আনু হলেন দেওভোগ এল এন রোড এলাকার মৃত হাজী সায়েদ আলীর ছেলে ও মহানগর যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় রাসেলসহ নিহতের সাবেক স্ত্রী, সন্তান, শ্যালকসহ ৮জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলা দায়েরের পর পুলিশ ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও রাসেল ও পান্না ছিলেন পলাতক।
উল্লেখ্য, এ মামলায় নিহতের সাবেক স্ত্রী পলাতক থাকলেও শ্যালিকা রোকসানা আক্তার পুতুল (৪৬), জান্নাত আরা জাহান প্রেরণা (২১), দূর আলম (৫৫), সারিদ হোসেন (১৯), কাজল (৩২) কে আগেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
নিহত আনোয়ার হোসেন আনুর বড় ভাই মামলার বাদী হাজী আবুল কাশেম বাদশা জানান, যে বাড়িতে ঘটনা সেখানে ডিভোর্সি স্ত্রী পান্না মিথ্যা কথা বলে বাড়ি ভাড়ানিয়েছে বলে ঐ বাড়ির ম্যানেজার আমাদেরকে জানিয়েছেন। আনু হত্যার ঘটনায় ফতুল্লা থানার পুলিশ মামলার আইয়ু আনোয়ার হোসেন এর এ হত্যাকান্ডকে নিয়ে অন্য দিকে প্রবাহিত করারচেষ্টা করে। মামলার আইয়ুর সন্দেহজনক আচারনে আমরা বিচলিত হই। পরে আমরা পিবিআইতে যোগাযোগ করলে তারা চেষ্টা করে দেখবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করে। এবং প্রকৃত মূল ঘটনা উদঘাটন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবী জানাই আমরা।
তিনি আরোও জানান, ঘটনার পূর্বে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম পাশে হেলেনা সেঞ্চুরি এ্যাপার্টমেন্টের বাসা ভাড়া নিতে যান পান্না ও নিহতের সন্তানেরা। ভবনের তখন ম্যানেজার প্রশ্ন করেবলেন আপনার স্বামী কই। পান্না বলেন বড় ভাইয়েরা আসতে দিবেনা। তাই কয়দিন পর আসবে। ম্যানেজারকে মিথ্যা তথ্যের ভিক্তিতে বাসা ভাড়া নেন পান্না। অথচ পান্নার সাথে আগেই ডির্ভোস হয়েছিল। তা গোপন রেখে বাসা ভাড়া নেয়। ম্যানেজার আমাদের জানিয়েছেন ঘটনার কয় দিন আগেও রাসেল মাহমুদ এসেছিলেন বিদ্যুৎতের মিটার দেখতে। মিটার চেকিং করতে। এছাড়াও রাসেল মাহমুদ প্রায়ই এখানে এসে থাকতেন।
শুক্রবার ৮ নভেম্বর দুপুরে নিহত মহানগর যুবদলের নেতা আনোয়ার হোসেন আনু’ বন্ধু মহলের আয়োজনে জানেআলম এর বাড়িতে মরহুমের ৭৫ দিনের মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দেওভোগ পানির ট্যাংকি এলাকায় মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এখানে রাজনৈতীক দল, ব্যবসায়ী ও বন্ধু মহলের সর্বস্তের মানুষ আনুর হত্যাকান্ডের বিচার দাবী করেন।
উল্লেখ্য যে, নিহত মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু (৪৮) এবং সে পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও যুবদলের নেতা ছিল। তার স্বজনেরা পূর্বে ও এসপি ডিসি স্মরক লিপিতে সহ সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ্য বলেছেন, গত সোমবার ২৬ আগস্ট দুপুরে ছোট ভাই আনুর মেয়ে আমার আরেক ভাতিজির কাছে ফোন করে জানায় ওর বাবাকে পাওয়া যাচ্ছেনা, পরমূহূর্তে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে থাকি, কোথাও তার কোন খবর মিলেনি। ঠিক বিকেল ৫ টার সময় মাসদাইর ঈদগাহ সংলগ্ন হেলেনা কটেজ এর দশ তলা বিল্ডিংয়ের লিফটের কোর জায়গায় আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনুর লাশ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। একী ভবনে তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতো। আমরা আশঙ্কা করতেছি তার ছেলে মেয়ে ওর মা এবং তার বর্তমান স্বামী রাসেল এর সাথে যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটায়। রাসেল অতীতে অনেকবার আনোয়ার হোসেন আনুকে মারার চেষ্টা করে যা কোনভাবে সফল হয়নি। রাসেল আমাদের সম্পর্কে ভাতিজা হয়, আমার জেটাতো ভাইয়ের ছেলে। রাসেলের সাথে তার স্ত্রীর পরকিয়ার সম্পক জানতে পারার পর থেকে আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনু তাকে বাড়িতে আসতে বারণ করে কিন্তু রাসেল বিভিন্ন উপায়ে তার স্ত্রী পান্নার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখে আর এ বিষয়টি একপর্যায়ে পারিবারীক ভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। দেওভোগের বাড়িতে বসবাসের কারনে স্ত্রী পান্না রাসেলের সাথে সহজেই মেলামেশা করতে না পারার কারনে সে স্বামীকে অন্যত্র বাসা নিতে চাপ প্রয়োগ করে। স্বামী আনোয়ার হোসেন পত্রিক ভিটা ছেড়ে মাসদাইর একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিতে বাধ্য হয় এবং সেখানে তার অনুপস্থিতীতে তার ছেলে মেয়ের সহযোগিতায় রাসেল বিভিন্ন সময় যাওয়া আসা করতে থাকে।
নিহত আনোয়ারের ফ্ল্যাটে রাসেলের যাওয়া আসার খবর জানতে পারার পর তার স্ত্রীকে রাগচাপ দিলে সে আনোয়ার হোসেনকে মারার জন্য ২০১৯ সাল জানুয়ারীর ২তারিখে আমলা পাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে রাসেলের সাথে দেখা করে, আর এই খবর আনোয়ার জানতে পেরে সাথে সাথে সে তার বন্ধু বান্ধব নিয়ে আমলা পাড়া ছুটে যায় এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় তাদের দুজনকে হাতেনাতে ধরে। ধরার পর পান্না ও রাসেল উভয়েই হাত জোড় করে ক্ষমা চায় আর ওয়াদা করে তারা আজকের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না। কিন্তু তারপরেও তারা অবৈধ যোগাযোগ বজায় রাখে। স্মারকলিপিতে আরোও বলা হয়,এ বিষয় নিয়ে পারিবারীকভাবে অশান্তি দেখা দিলে স্ত্রী পান্না পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় আনোয়ার হোসেন আনুকে ২০২০ সালের ৩০শে জুন তালাক নোটিশ পাঠায়। এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েকে তার বাবার কাছে রেখেই ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাসেলের সাথে বিবাহ কাজ সম্পন্ন করে। মায়ের প্ররোচনায় ছেলে মেয়েও বাবার সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করতে থাকে, এমন কি মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ে বাবার গায়ে হাত তুলতো, কিন্তু আমার ছোট ভাই লজ্জায় কাউকে কিছু বলতো না। ওরা প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে নাস্তানাবুদ করে রাখতো। আমরা পারিবারীকভাবে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি এই নৃশংস হত্যাকান্ড তার দুই সন্তান, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পান্না ও পান্নার বর্তমান স্বামী রাসেল ঘটিয়েছে। এই রহস্যজনক হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনি সহায়তা পেতে আমরা ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করি।