শুক্রবার ১৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মেলনের শুভ সূচনা করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন শাশ্বতী পাল ও তার দল। জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: ফওজিয়া মোসলেম, সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লক্ষ্মী চক্রবর্তী। এ পর্ব পরিচালনা করেন সদস্য ও আবৃত্তি শিল্পী ফাহমিদা আজাদ।
এরপর প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এ পর্ব পরিচালনা করেন সদস্য সীমা হক। শুরুতেই সংগীত পরিবেশন করেন শাশ্বতী পাল ও তার দল এবং নৃত্য পরিবেশন করেন অন্তর ও তার দল। এরপর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জেলার সদস্য রোকেয়া খাতুন। এ সময় ১মিনিট নীরবতা পালন করা হয় । অতিথিদের উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। প্রথম অধিবেশনে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক সহ-সভাপতি রীনা আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও জেলার সাবেক সভাপতি আনজুমান আরা আকসির। এরপর সম্মেলনের অতিথিবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন- প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: ফওজিয়া মোসলেম, বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও কেন্দ্রীয় সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম, উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সম্পাদক ডাঃ দীপা ইসলাম। সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লক্ষ্মী চক্রবর্তীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি হয়।
দ্বিতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হাসিনা পারভীন, সংগঠন সম্পাদক প্রীতিকণা দাস, লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানারা বেগম, ভারপ্রাপ্ত অর্থ সম্পাদক লায়লা ইয়াসমিন, আন্দোলন সম্পাদক শোভা সাহা, ভারপ্রাপ্ত প্রশিক্ষণ গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রওনক রেহানা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রওশন আরা বেগম, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন সহ-সাধারণ সম্পাদক রহিমা খাতুন, প্রচার সম্পাদক কানিজ ফাতেমা স্ব স্ব রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। রিপোর্টের উপর আলোচনা করেন শহর সংগঠন সম্পাদক নীলা আহমেদ, তরুণী সদস্য তিথি সুবর্ণা ও সুমাইয়া সেতু।
সাধারণ প্রস্তাব পাঠ করেন সদস্য এড. বিলকিস ঝর্ণা। এরপর পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লক্ষ্মী চক্রবর্তী। রীনা আহমেদকে সভাপতি ও রহিমা খাতুনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠন করা হয়। শপথ বাক্য পাঠ করান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: ফওজিয়া মোসলেম।
বক্তারা বলেন- করোনা মহামারী, বৈশ্বয়িক ও দেশের চরম সংকটময় পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ সময় পর জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। নারায়ণগঞ্জ জেলা সব সময় চ্যালেঞ্জ নিয়ে সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা লাভ করেছে। করোনা মহামারীতে ঘরে বসে থাকেনি । নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গনতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র, সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত ৫৩ বছর ধরে সংগঠনটি বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনে কাজ করতে হলে প্রত্যেক সদস্যকে অবশ্যই ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র পাঠ করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং বুকে ধারণ করতে হবে, অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। অন্যকে সংগঠন সম্পর্কে জানাতে হবে। বাংলার নারী আন্দোলনসহ সকল জাতীয় আন্দোলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে জেন্ডার সমতা, দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন, সচেতনতা বৃদ্ধি, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তি, সম্পত্তিতে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ প্রভৃতি বিষয়ে আজ পর্যন্ত আন্দোলন করে চলেছে। মহিলা পরিষদ এবার অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু এবং সাইবার ক্রাইম ও মাদক নিরোধ আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করার জোর দাবী জানাচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খৃষ্টান সকল সম্প্রদায়ের এক ও অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করতে হবে। বিবাহ ও তালাক সংক্রান্ত আইন, সম্পত্তি আইন সব সম্প্রদায়ের এক হওয়া জরুরী। এভাবেই সংগঠনটি চ্যালেন্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে চলেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী- শিশুসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। সেদিকে সরকারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও ভূমিকা পালন করতে হবে।
এসময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ জেলা ও পাড়ার দেড় শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।