নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের নির্বাচন আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। জেলার এলিট শ্রেণির লোকজন এই ক্লাবের সদস্য। ভোটের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত প্রার্থীরা। দীর্ঘ সময় ধরে এই ক্লাবটি প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ওসমান পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয় ক্লাবটি। এতে করে আগামীকাল প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
তবে, শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে প্রেক্ষাপট বদলেছে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, তার বড়ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদেরও অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আবার কেউ দেশের মধ্যেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। কয়েকজন আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওসমান পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠরা অনেকেই এ ক্লাবের সদস্য। শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, শামীমের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, এহসানুল হাসান নিপু, এস এম রানা নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সদস্য। তাদের মধ্যে টিটু এ ক্লাবের একাধিকবারের সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ক্লাবের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছিল।
এবার তারা পলাতক থাকায় সরাসরি তাদের কোনো প্রভাব যেমন নেই, তেমনি ভোট দিতে আসার সম্ভবনাও ক্ষীণ। ফলে, এবারের নির্বাচন অনেকটা ‘ওসমান প্রভাবমুক্ত’ বলছেন ক্লাবের সদস্যদের অনেকে। তবে বিগত সময়ে ওসমান পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন এমন অনেকেই আবার ‘ভোল পাল্টে’ ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সদস্যের তালিকায় ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, শামীম ওসমানের বেয়াই ফয়েজউদ্দিন লাভলু, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি রামু সাহা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনিও রয়েছেন। যদিও তারা সকলেই লাপাত্তা। এদিকে, হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা। ক্লাবের সদস্য হলেও তারা ভোট দিতে আসবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, সবদিক বিবেচনায় রেখে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। শেষ মুহুর্তে ভোটারদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। পার করছেন ব্যস্ত সময়। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ।
এ নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দু’জন। তাদের মধ্যে এম সোলায়মান নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তিনবারের সভাপতি। নেতৃত্ব দিয়েছেন সুতা ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের। অপর প্রার্থী মাহবুবুর রশীদ জুয়েল এর আগে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। জুলফিকার স্টিল মিলের সত্ত্বাধিকারী জুয়েল স্টিল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক।
উভয় প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা প্রতিশ্রুতি সামনে রেখেছেন তারা।
এ নির্বাচনে এগারোটি পদের জন্য এগারো জনকে নির্বাচিত করবেন ভোটাররা। সভাপতি ছাড়ও দু’জন সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন এবং বাকি আটজন হবেন পরিচালক।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদ পেতে লড়ছেন ইকবাল হাবিব ও মারুফ আহমেদ বাবু। অপরদিকে দ্বিতীয় সহসভাপতি পদে লড়ছেন মো. সাইদুল্লাহ হৃদয়, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুজ্জামান মৃধা, খাজা এবায়দুল হক টিপু।
এছাড়া আটটি পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুল কাদির মাহবুব, কাজী আব্দুস সাত্তার, কৌশিক সাহা, মো. জাহিদ, অ্যাডভোকেট ইন্দ্রজিৎ সাহা দীপক, দিলারা মাসুদ ময়না, হারুন-অর-রশিদ, খান হোসেন, মো. তৌহিদুল ইসলাম খান, তাইজুদ্দিন আহমেদ, সেলিম রেজা।
নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান আনিসুল ইসলাম সানি। এছাড়া কমিশনে রয়েছেন আলহাজ্ব সাইফুল আলম, কুতুবউদ্দীন আহমেদ, অ্যাডভোকেট মো. রাকিবুল হাসান শিমুল, মোহাম্মদ হোসেন মিঠু এবং নির্বাচন আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এড. মো. জাকির হোসেন, সদস্য মো. নবী হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন (বাবু)।