নগরীতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) নগরীর মিশনপাড়া এলাকায় নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও কোরআন পাঠ করা হয়। কর্মী সম্মেলনে মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধান অতিথি জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক রাজিব আহসান, প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম জি মাসুম রাসেল।
সম্মেলনে রাজীব আহসান বলেন, আজ এই কর্মীসভায় উদ্দেশ্য হলো এই মহানগরের কমিটিকে গতিশীল করবো। সংযোজন ও বিয়োজন করে এই যারা সংগ্রামে ছিলেন তাদের নিয়ে কমিটিকে গতিশীল করবো। এতো আপনারা দলের জন্য কাজ করেছেন, আজ আপনারা দলের কাছে চাইবেন। আজ আপনাদের দলের কাছে পারিশ্রমিক চাওয়ার দিন। আপনাদের অনেকে অনেক কথা বলেছেন। তবে যারা বলতে পারেননি তাদের কোথাও আমরা জানি। নারায়ণগঞ্জের ৪ টি থানা আছে। এই থানাগুলোতে এই সম্মেলনের পর নতুন কমিটি হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে ঢাকার পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো নারায়ণগঞ্জে। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল ১৭ বছর এই রানা ও বাবুর নেতৃত্বে রাজপথে ছিল, কিন্ত তখন অনেকেই ছিলো না। বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জে গুলি চালানো ছিলো ডাল-ভাতের মত ব্যাপার। তারা মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করতো না, নির্বিচারে গুলি করতো। এই রানা বাবু তখন মশাল মিথিল করেছে। তারা সংখ্যায় যাই হোক, তারা সংখ্যায় বেশি ছিল সেটার কৃতিত্ব সেচ্ছাসেবক দলকে দিতেই হবে। দলে রাজনৈতিক অরাজনৈতিক নেতাও আছে। এখন সরকারে বসে আছে এমন অনেকেই হাসিনার দালালি করেছে। আজ আমরা তাদের কথা শুনি আর হাসি।
তিনি আরও বলেন, কিছু লোক ২৪শের চেতনাকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। একটা চেতনা তৈরি করতে সময় লাগে, নষ্ট হতে সময় লাগে না। মানুষ বাক স্বাধীনতা চায়। আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে না কিন্তু তারা ভুল করলে আমরা বলবো। তাদের ভুল গুলো বললেই তারা আমাদের শত্রু মনে করছে। ভালো সময়ের মানুষের অনেক বন্ধু হয়। আগে বিভিন্ন সময় যারা আছে তারা যখন বিপদে পড়েছেন, তাদের সহানুবর্তীতা দয়ার জন্য তারেক রহমান ছাড়া কেউ ছিলো না। ২৪শের অভ্যুত্থান হয়েছে ৬ মাস হলো। কিন্ত সরকার বলতে পারেনি কতজন শহীদ ও আহত হয়েছে। আমরা বলছি এই নিহতদের পঙ্গুদের সংখ্যা দেখাতে হবে ও এই পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রের জন্য আজ যারা নিহত হলো তাদের পরিবারকে দেওয়া হলো ৫ লাখ টাকা। শহীদের জীবনের দাম ৫ লাখ টাকা হয় এই চেতনা থাকবে না। শুধু টাকা নয়, আন্দোলনে শহীদ ও আহত প্রতিটি পরিবারের একজনকে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী। সরোর চাইলে ২ হাজার লোককে চাকরি দিতে ২ দিন লাগে। কিন্তু তাদের মাথায় তো এগুলো নাই। এখন তাদের মাথায় উইপোকা ঢুকেছে। এই পোকা চেতনাও খাবে, মাথাও খেয়ে ফেলবে। ওরা তো নতুন, আমরা পূরণ মাল। আপনারা সঠিক পথে না থাকলে আপনারা হারিয়ে যাবেন। ৫ তারিখের আগের ইতিহাস গত হয়ে গেছে। সংগ্রামে যে সুনাম অর্জন করেছেন সেটা কতটুকু ধরে রাখতে পারেন তাই দেখতে চাই। নারায়ণগঞ্জে অনেক কথা শোনা যায়। আমরা তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে চলবো। যদি বন্যার ময়লা পানিতে নেমে মানুষকে উদ্ধার করতে আসা বা গভীর রাতে আগুন লাগা ঘর থেকে মানুষ উদ্ধার করতে পারা মানসিকতা থাকে তাহলেই সেচ্ছাসেবকদল করতে আসবেন। আমরা যে কমিটি করে দিয়ে যাবো, আমাদের সেটার জবাবদিহিতা করতে হবে। যদি আপনারা নেতাকে না মানেন তাহলে দল কিভাবে আপনাকে মানবে। নারায়ণগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক দল করতে হবে রানা বাবুর সাথে, অন্যকারো সাথে গেলে তো সেচ্ছাসেবক দল করা হবে না। কেউ অধ্যত্বপূর্ণ আচরণ করবেন না। এই নারায়ণগঞ্জের এক ভদ্রলোক ছিলো যে শুধু খেলা হবে, খেল হবে বলে। কিন্তু যখন খেলা শুরু হলো তখন সে নাই। আপনি আসেন মাঠে, এখন তো মাঠে কেউ নাই। এখন আসেন খেলতে। ঠিক মত দাঁড়াতে পারে না কিন্তু খেলা হবে খেল হবে বলে। সামনে-পিছনে পুলিশ, র্যাব নিয়ে এগুলো বলা খুব সহজ। সেখানে রানা ভাই মিছিল করেছে ৬০ জন নিয়ে। কিন্তু এই ৬০ জনের মূল্য আমার কাছে অন্য জায়গার ৬ হাজার কর্মীর থেকে বেশি। বিএনপিতে অন্য দলের কারো যোগদান হবে না। কিন্তু সাধারন মানুষ ও তরুণ প্রজন্মের সাথে আমরা কাজ করতে চাই।
কেন্দ্রী কমিটির এই নেতা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের কমিটিকে একটা টার্গেট দেই। এখানে ৫ লাখ ভোটার আছে। প্রতি ১০০ জনের একজন যেন স্বেচ্ছাসেবক দল করে এই টার্গেট নেন। অনেকে বলে বিএনপি সংস্কার চায় না, ভোট চায়। বিএনপি কি বলেছে সংস্কার ছাড়া ভোট চায়? তোমরা তোমাদের রোড ম্যাপ দাও। কি কি কাজ করবা, কত সময় লাগবে সেটা বলো। তোমরাই তো জানো না তোমরা কি করতে চাও। অন্যের বুদ্ধিতে চললে হবে না। বিএনপি দ্রুত সংস্কার চায়। বিগত সময় আমরা ১ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি। কেউ ভুল করে কিন্তু আমরা তাদের প্রশ্রয় করি কিনা সেটা আপনারা দেখবেন। তারেক রহমান আপনাদের অনেক ভালোবাসেন। এই ভালবাসার সাথে প্রতারণা করবেন না। ভুল পথে থাকলে সংশোধন হন, দল থেকে বের ছিটকে পড়ে থাকবেন। এখানের অনেক বড় নেতা আছে যাকে অনেক সম্মান করতাম। সে লোভের কারণে দল থেকে ছিটকে গেছে। এখন তার খবরও কেউ নেয় না। মানুষের ভালোবাসা ছাড়া আমাদের পাশে কেউ নাই। এই ভালবাসার কারণেই আমরা ১৭ বছর টিকে ছিলাম।
সভাপতির বক্তব্য মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা বলেন, আমরা প্রথম ভাইপার হাসিনা নাম দিয়েছি। সেই ভাইপার হাসিনা পালিয়েছে। আমরা বলেছি রাইফেল ক্লাব থাকবে না, এখন ও নাই। আমাদের রাজীব ভাইয়ের মত নেতৃত্ব আমি আগে কখনো দেখি নি। রাজীব ভাইয়ের কাছে আবদার থাকবে আমাদের দলের কিছু নেতা বিভিন্ন মামলায় কাশিমপুর কারাগারে আছে। তার ছোট মেয়ের বয়স আজ ১৭ বছর। তার যেন মিথ্যে মামলায় আর জেল খাটতে না হয়। ৫ তারিখের আগে যারা রাজপথে থেকেছেন তারাই কমিটিতে থাকবেন। আমার কোনো ভাই-বোন নাই, আমি দলের কথা বলি। দেশ নায়ক তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে ফিরে আসবেই।
সম্মেলনে মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মমিনুর রহমান বাবুর সঞ্চলনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এড সামলা সোমা, কেন্দ্রীয় সংসদের স্বাস্থ বিষয়ক সম্পাদক ড. মিজান, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক গোলাম, সদস্য সফিকুল ইসলাম দেওয়ান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফাতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মহানগর সেচ্ছসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুর রহমান সুমন, মিঠু ও বিভিন্ন থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।