অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টার ভাগ্নে পরিচয়ে রিন্টু মিয়া নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জর ফতুল্লায় জমি দখলের চেষ্টা ও পত্রিকা অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারী ) সকালে ফতুল্লার চাঁনমারি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত রিন্টু মিয়া শহরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সহ একাধিক ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিও’তে দেখা যায়, রিন্টু মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক পত্রিকা অফিসের সামনে এসে হইচই শুরু করে। এ সময় তারা সিটিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। তবে ভাঙচুরের আগে কিছু সময়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় তিনি ওই জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তাদেরকে বাধা দিয়ে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়ে রিন্টুকে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যায়। বাহিনী নিয়ে হামলার বিষয় তিনি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রিন্টু মিয়ার নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক লোকজন ওই জমিতে প্রবেশ করে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে ও গোডাউন ভাঙচুর করে। এসময় তারা সিসি ক্যামেরাও ভাঙচুর করে ও স্থানীয় দৈনিক উজ্জীবিত বাংলাদেশ পত্রিকার সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জমির মালিক তাইজুল ইসলাম রাজীব বলেন, এ জমিটি প্রায় তিন দশক আগে আমার বাবা কিনেছে। এরপর থেকেই জমিটি আমরা ভোগ দখল করে আসছি। আজ সকালে এক উপদেষ্টার ভাগ্নে পরিচয়ে রিন্টু ও তার বাহিনী নিয়ে আমাদের জমি দখল করতে আসে। প্রায় দুই শতাধিক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের জমিতে সাইনবোর্ড লাগাতে আসে। এসময় তারা আমার নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করে। সিসি ক্যামেরা ও দৈনিক উজ্জীবিত বাংলাদেশ পত্রিকার সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে। তারা জমিটির ভেতরে ভাড়া দেয়া গোডাউন এর তালা ভেঙ্গে ভাড়াটিয়াদের মালামাল লুট করে।
তিনি আরো জানান, এক ব্যবসায়ী নেতা গতকাল আমাদের এক প্রতিনিধিকে ফোন করেছিলেন। জমিটি নিয়ে এক উপদেষ্টার স্বামী তাকে ফোন দিয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে বসতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই আজ সকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
দৈনিক উজ্জীবিত বাংলাদেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কবিরুল ইসলাম বলেন, জমি নিয়ে বিরোধ থাকলে আইন আদালত আছে। কিন্তু তারা অন্যায়ভাবে জমিতে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটপাট করতে পারে না। আমার অফিসের সাইনবোর্ড ও সিসি ক্যামেরা ভেঙেছে। নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করেছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রিন্টু মিয়া এক সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জাকিরুল ইসলাম পারভেজ অনুসারী ছিলেন। পরে যুবলীগ নেতা পারভেজ গুম হলে তিনি দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমান। সম্প্রতি এক উপদেষ্টার আত্মীয় পরিচয়ে তিনি প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিন্টু মিয়াকে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলা হয়েছে। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। সেখানে দুটি ক্যামেরা ভাঙচুর বিষয় জানতে পেরেছি। সেখানে একটি পক্ষ ভাঙচুর করেছে এবং কিছু মাল লুটের ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষকে আমি থানায় ডেকেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।