এ যেনো এক মগের মুল্লুকে বাস করছে নারায়ণগঞ্জবাসী! ধনী জেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও উন্নত হয়নি চিকিৎসা সেবার মান। নামমাত্র পরিদর্শনে গিয়ে এটা করব সেটা করব কিন্তু বাস্তবে তার দৃশ্যমান কিছুই দেখা যায় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অসহায় রোগী ও স্বজনেরা যেনো চিকিৎসা সেবার অনিয়মের জিম্মিদশা থেকে কোন প্রকারে বের হতে পারছেননা। নারায়ণগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতন গড়ে ওঠা সরকারি-বেসরকারী হাসপাতাল ও প্যাথলজি ল্যাব এর রোগী সহ স্বজনদের হয়রানী ও দুর্ভোগ শেষ নেই। অভিযোগ করলেও কাজ করছেননা, এমনই অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আ.ফ.ম মুশিউর রহমান (বাবু) এর বিরুদ্ধে, অসংখ্য অভিযোগের আঙ্গুল তুললেন জেলার ভুক্তভোগীরা।
এমনই অভিযোগ এসেছে নারায়ণগঞ্জের রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে। উল্লেখ্য যে ২০২৩ইং সালে দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিশু বাচ্চা ইয়ামিন হোসেনের পেট থেকে বের হলো ”মোপ” ব্যান্ডেজ কাপড়! ডাঃ ও মেডিহোপ’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি সিভিল সার্জন। ২০২৪ সালে হাফিজ নামের আরেক ব্যাক্তির বড় ভাইয়ের গর্ভবতী স্ত্রীর বাচ্চা নষ্ট হলে এলাইড হাসপাতালে ডিএমসি করার সময় নার কেটে ফেললে আরোও বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।
২০২৫ইং সালের ৩ই এপ্রিল ৩শ শয্যা খানপুর হাসপাতালে রায়হান বেপারীর স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়। গর্ভবতী মায়ের বাচ্চার অবস্থান জানতে সেখানকার কর্তব্যরত গাইনী ডাক্তার পঞ্চমী গোস্বামী আলট্রা করাতে বলেন। কিন্তু আলট্রা করাতে গিয়ে পড়েন খপ্পরে। আলট্রা না করিয়ে ভালোমানের ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করাতে বলেন মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসাঁ ল্যাব এর কর্তৃপক্ষ। অথচ গর্ভপাতের আরোও দের মাস সময় ছিল। বাচ্চাকে ২৪ ঘন্টা অক্সিজেন দেওয়া হয়। পরের দিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাচ্চাকে এলাইডে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও বাচ্চা রেখে তালবাহানা করার পড়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। এবিষয়ে সিভিল সার্জনের দপ্তরে অভিযোগ করা হয় এবং রিসিভ কপিও নেন রায়হান।
গত মঙ্গলবার (২৯শে এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় সিভিল সার্জন বলেন আমার হাতে বা দপ্তরে এমন কোন অভিযোগ আসে নাই বলে চুপিশারে দায় এরিয়ে যান তিনি। পড়ে এবিষয়ে সিভিল সার্জন’র থেকে এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছেন এমন অভিযোগ আমার দপ্তরে আসে নাই? ডিসির কাছে এমন অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ঐ আলোচনা সভায় সেবা মানউন্নয়ন নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সিভিল সার্জনকে।
স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে এমন ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জন ডা. আ.ফ.ম মুশিউর রহমান (বাবু) এর দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পরও অস্বীকার করেন তিনি এবং ডিসি অফিসের কথা বলে তার দায় ডিসি সাহেবের উপর চাপানোর চেষ্ঠা করছেন নাতো?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের পর জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসন রদবদল হলেও সিভিল সার্জন এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসা সেবা মানোন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজি ল্যাব এবং ডাক্তারদের চেম্বার খুলে পরীক্ষা নিরিক্ষা বানিজ্য সহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি তাকে। সিভিল সার্জন আসার পর সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছেন কিন্তু কোন প্রকার অনিয়মের ব্যবস্থাগ্রহণ করেন নাই এবং নতুন অবস্থায় অনেক অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজি ল্যাব তালিকা ভূক্ত হলে নামমাত্র অভিযান চালায় এবং কয়েকটি অবৈধ ক্লিনিক হাসপাতাল সিলগালা করা হলেও পূণরায় তা সচল করে ফেলেন। তাই জেলা প্রশাসক নারায়ণগঞ্জ বাসীকে চিকিৎসার সেবার মান উন্নত ও ভালো রাখবে এবং অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সে যেই হোক কঠরহস্তে দমন করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন নারায়ণগঞ্জবাসী।