নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটিতে চরম দ্বন্দ্ব কোন্দল দেখা দিয়েছে। অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিতদের কমিটিতে পদায়ন সহ আওয়ামী লীগের দোসরদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দলের নেতাকর্মীরা দুভাবে বিভক্ত হয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন। এমনকি চাঁদাবাজি ও দখলবাজির সহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতৃবৃন্দরা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ডা. শাহিন মিয়া ও সদস্য সচিব আলম মিয়া।
এর আগে, গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী পাল্টা অভিযোগ করে কমিটি বাতিল করার দাবি জানান।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ডা. শাহিন মিয়া বলেন, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও স্বৈরাচারের দোসরদের সাথে আমাদের দলের কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি মিলে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সার্জেন্ট মোমেন, আমির বেপারী ও আহমেদ বাবুল। তাদের মধ্যে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বর্তমান জেলা কমিটি যুগ্ম আহবায়ক পদে থাকলেও বিগত সময়ে তাকে রূপগঞ্জ থানার সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সার্জেন্ট মোমেন বর্তমানে জেলা কৃষক দলের সদস্য পদে থাকলেও বিগত সময়ে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সভাপতি পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ফতুল্লা থানার আহবায়ক পদ থেকে আমির বেপারী ও সোনারগাঁও থানার সদস্য সচিব পদ থেকে বাবুল আহমেদকে অনেক আগে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের দুজনের সাথে কৃষকদলের বর্তমানে কোন সম্পর্ক নেই।
জেলা কমিটি যুগ্ম আহবায়ক নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহবায়ক ও রূপগঞ্জ থানার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসরের সাথে সখ্যতা, দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর রূপগঞ্জ থানার সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে তার কোন সম্পৃক্ততা ছিলনা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তিনি রফিকুল ইসলাম ওরফে আন্ডা রফিক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনের যোগসাজশে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের একাধিক মৌজার আবাদী জমিতে বালু ভরাট করে কৃষকদের জমি বিনষ্ট করেছিল। গ্রামের অসহায় ব্যক্তিদের বাড়ি ঘর জোরপূর্বক দখল করেছিল। এমনকি আওয়ামী লীগের দোসরদের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য তিনি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর নানাভাবে নির্যাতন চালিয়েছিলেন। এভাবে বিগত সময়ে তিনি স্বৈরাচার সরকারের লোকজনদের আস্থাভাজন হয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা সহ স্বৈরাচারদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের সুসংগঠিত সংগঠনকে নিঃস্ব করতে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে নজরুল সহ তার সহযোগিরা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দলীয় হাইকমান্ডকে জানিয়েছি।
কৃষকদলের সদস্য সার্জেন্ট মোমেন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জেলা কৃষক দলের সদস্য ও রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সার্জেন্ট মোমেনকে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গত ১০ এপ্রিল রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তিনি নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। গত ৫ আগস্টের পর রূপগঞ্জে তার এলাকায় ৪০ বিঘা জমির উপর মাছের প্রজেক্ট দখল করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখনো এলাকার সাধারণ মানুষকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে যঠেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে তাকে রূপগঞ্জের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ফতুল্লা থানার আহবায়ক পদ থেকে আমির বেপারী ও সোনারগাঁও থানার সদস্য সচিব পদ থেকে বাবুল আহমেদ কে অনেক আগেই বহিস্কার করা হয়েছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে। সেগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। তারা মূলত দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এবং আওয়ামী লীগের দোসরদের পারপাস সার্ভ করার জন্য নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়েছে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের সাথে তাদের ছবি রয়েছে। অথচ তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে, যার তীব্র নিন্দা জানাই।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব মো. আলম মিয়া, যুগ্ম আহবায়ক জুয়েল আরমান, শাহ আলম, সেলিম দিপু, শাহাদাত চৌধুরী, মুজাম্মেল মেম্বার, সদস্য নাজিম, সবুজ সহ প্রমুখ।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহবায়ক ও রূপগঞ্জ থানার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। তারা মূলত টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে এনেছেন। এছাড়া তাদের সাথে আওয়ামী লীগের দোসরদের সম্পর্ক রয়েছে, যার ছবি আমরা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমকে দেখিয়েছি। এসব অপরাধ ঢাকতে তারা আমাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছে।
এর আগে, গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা কৃষকদলের একাংশের নেতৃবৃন্দরা পাল্টা অভিযোগ তুলে জেলা কৃষকদলের কমিটি বাতিলের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, “কৃষক দলের জেলা কমিটি শাহিন ও আলমের কাছে নিরাপদ নয়। তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর। অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তোপের মুখে পড়ে দুজনকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে জেলা কৃষকদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। একারণে জেলা কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
সেই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষক দলের সদস্য ও রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সার্জন মোমেন, ফতুল্লা থানার সাবেক আহবায়ক আমির বেপারী ও সোনারগাঁও থানার সাবেক সদস্য সচিব বাবুল সহ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষকদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক হিসেবে ডা. শাহিন মিয়া ও সদস্য সচিব হিসেবে মো. আলম মিয়াকে রাখা হয়। পরে গত ২৩ এপ্রিল দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী দেওয়ান মাহমুদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলীকে কেন্দ্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।