নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর হুমকি দেওয়ার একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন ব্যবসায়ী আজাদ। রিয়াদ চৌধুরীর সাথে ব্যবসায়ী আজাদের কথপোকথনের সেই অডিও ক্লিপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে নেন ও সংবাদ প্রকাশ করতে নিষেধ করেন প্রতিবেদককে। এবং হুমকি দেওয়ার বিষয়ে নানা ব্যখ্যা দেন। তবে সম্প্রতি রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী গ্রেফতার ও বহিষ্কার হলে অডিও ক্লিপটি এডিট করা বলে দাবি করেন ওই ব্যবসায়ী আজাদ। এমনকি তিনি এলোমেলো বক্তব্যও দিয়েছেন। তবে এই বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৩ মে) বিএনপি নেতা রিয়াদ চৌধুরীর একটি অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেই রেকর্ডে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সাবেক) রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী ফোনে আজাদ প্লাজা গার্মেন্ট অ্যান্ড ডাইং কারখানার মালিক আজাদ হোসেনকে হুমকি দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরিয়ে দেব।’ দীর্ঘ সময়ের সেই রেকর্ডে ব্যবসায়ীকে শাসিয়েছেন সাবেক বিএনপি নেতা রিয়াদ।
এই ফোনালাপের অডিও রেকর্ডটি সাংবাদিক রবিউল ইসলামের কাছে আসলে তিনি সংবাদ করার জন্য ব্যবসায়ী আজাদকে ফোনে প্রশ্ন করেন। সেই রেকর্ডটি ভয়েজ অব নারায়ণগঞ্জের প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। সেই রেকর্ডের এক অংশে সাংবাদিক রবিউল ইসলাম ব্যবসায়ী আজাদকে প্রশ্ন করে বলেন, রিয়াদ ভাইয়ের সাথে আপনার একটি ফোনলাপের অডিও রেকর্ড আমার হাতে এসেছে। সেই রেকর্ডে শুনতে পেয়েছি, ‘তিনি (রিয়াদ চৌধুরী) আপনার ফ্যাক্টরী জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।’ এ নিয়ে নিউজ করবো। এর প্রতি উত্তরে ব্যবসায়ী আজাদ বলেন, তুমি এই বিষয়ে থেমে যাও, বাবা। এটা নিয়ে আর আগাইও না। ও (রিয়াদ) আমার সমন্ধির ছেলে। তুমি চাইপা যাও, আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) করলাম। এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার, চাইপা যাও। এটা নিয়ে আমি আর কিছু করতে চাইনা। পরে আমি তোমাকে সাক্ষাতে এ বিষয়ে কথা বলবো।’
রিয়াদ চৌধুরীকে কোন চাঁদা দিয়েছেন কিনা- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী আজাদ বলেন, না, এরকম কিছু না।
আপনাকে ফোনে হুমকি দিলো কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে আজাদ বলেন, ‘৫ আগস্ট পুরো বাংলাদেশে একটা বিশৃঙ্খল ছিল। ওই সময় যে যাকে পারছে করছে। এটা তুমি কিভাবে নেও সেটা জানিনা। এটা আসলে বলার ভাষা আমার নাই।
ওই সময় সে (রিয়াদ) সুযোগ নিতে চেয়েছিল নাকি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাই হোক আমি এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইনা। তুমি আর এটা নিয়ে আগাইওনা। আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করলাম।
যদিও ফোনালাপের শুরুতে রিয়াদ চৌধুরীর সাথে ঝামেলার কথা অস্বীকার করেন ওই ব্যবসায়ী। তবে ফোনালাপের সুনিদিষ্ট বিষয় সমূহের বর্ণনা দেওয়া শুরু করলে বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিবেদককে নিউজ করতে বারণ করেন এই ব্যবাসয়ী।
এদিকে এই ঘটনার পরে গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফতুল্লা থানা বিএনপির (সাবেক) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার পথে আটক করেছে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। একইদিনে তার দলীয় সকল পদ থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি দলটি।
তবে রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী গ্রেফতারের পর ওই দিন বিকেলে এই নেতাকর্মী ও অনুসারীরা আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করে। সেখানে তার নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যবসায়ী আজাদকে দেখা গেছে। ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় রিয়াদ চৌধুরীর নেতাকর্মীদের মাঝে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী আজাদ। এমনকি তিনি এতোটাই ভীতসন্ত্রস্ত ছিল যে, উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করার ৫ সেকেন্ড পর তিনি উত্তর দেন।
ফোনালাপের অডিও রেকর্ড সম্পর্কে আজাদ গার্মেন্ট ও ডাইং এর মালিক আজাদ বলেন, এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়। রিয়াদ চৌধুরী আমার ভাগনে, ও আমার সমন্ধির ছেলে। ওর সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। তার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে রবিউল নামে এক সাংবাদিক আমাকে ফোন করে বলেন, রিয়াদ চৌধুরীর সাথে আমার কথাপোকথনের একটা রেকর্ড রয়েছে, তিনি সেটা ফাঁস করে দেবেন। ওই সময় আমি তাকে এটা করতে নিষেধ করি এবং বলি এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। এটা আগে বাড়াইও না। এ বিষয় নিয়ে আমার সাথে রিয়াদের কোন দ্বন্দ্ব নেই।
কল রেকর্ড ফাঁস করার বিষয়টি আপনি দেখেছেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কল রেকর্ডটি দেখিনি, তবে শুনেছি (অন্যদের কাছ থেকে শুনেছি)।
ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডটি সঠিক কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কল রেকর্ডের পুরোপুরি সঠিক নয়। এতে কিছুটা এডিট করা আছে।
কল রেকর্ডের কোন ইস্যুগুলো আপনার কাছে এডিটিং মনে হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না। এটা দীর্ঘদিনের বিষয়। অনেক দিনের বিষয়। এটা একটা প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা ব্যবসায়ী আজাদকে এ বিষয়ে আরও প্রশ্ন করতে চাইলে তাকে ঘিরে রাখা রিয়াদ চৌধুরীর অনুসারী ও কর্মীরা ধন্যবাদ দিয়ে সেখান থেকে তাকে নিয়ে চলে যান। এই ব্যবসায়ীকে আর কথা বলতে দেননি।