মাদ্রাসা ছাত্র হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক মামলা, বাদী চিনেনা আসামিদের
Reporter Name
Update Time :
মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫
৩০
Time View
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে নিহত মাদ্রাসাছাত্র মো. ইব্রাহিম (১৩) হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। নিহতের আত্মীয়তার বিষয়ে ভিন্নমত, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মৃত্যুর বিবরণ এবং একাধিক থানায় আলাদা মামলা দায়ের হওয়ায় এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য।
প্রথম মামলা: ২২ আগস্ট ফতুল্লা থানায় দায়ের হওয়া প্রথম মামলায় বাদী হিসেবে নিজের পরিচয় দেন মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি নিজেকে নিহত ইব্রাহিমের মামা বলে দাবি করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ইব্রাহিমের পিতা-মাতা মারা গেছেন। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, টেলিভিশন সাংবাদিক, আইনজীবীসহ মোট ৬১ জনকে নামীয় আসামি করা হয় এবং অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনকেও অভিযুক্ত করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯ জুলাই বিকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আগ্নেয়াস্ত্র ও ককটেল নিয়ে হামলা চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ইব্রাহিম নিহত হয় বলে দাবি করা হয়।
কথিত মামা সাইফুল ইসলামের বক্তব্য: সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম জানান, “ইব্রাহিম আমার আপন ভাগিনা নয়। সে আমার বাড়ির পাশে কাজ করত এবং মাঝে মাঝে আমাকে মামা বলে ডাকত।” তিনি আরও বলেন, “মামলার কাগজে কী লেখা হয়েছে জানি না। আমাকে কিছু সই করতে বলা হয়েছিল, তাই করেছি। আসামিদের কাউকে আমি চিনি না।”
এছাড়া, ইব্রাহিমের পিতা-মাতাকে মৃত দেখানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “তাদের সংসার বিচ্ছিন্ন, তবে কেন মৃত দেখানো হয়েছে তা জানি না।”
দ্বিতীয় মামলা: এ ঘটনার কয়েকদিন পর, ২৪ আগস্ট নিহত ইব্রাহিমের প্রকৃত বাবা মো. হানিফ (৬৫) বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দ্বিতীয় মামলায় নিহতের স্থান, সময় ও ঘটনার বিবরণ প্রথম মামলার সঙ্গে বেশ ভিন্ন।
এই এজাহারে বলা হয়, সেদিন সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রীজ এলাকায় আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ইব্রাহিম মারা যায়। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৩৫ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়।
ফতুল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “একই ঘটনায় একাধিক থানায় মামলা দায়ের করা যায় না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।”
সোনারগাঁ থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান বলেন, “ঘটনার প্রকৃত স্থান সোনারগাঁ থানা এলাকায় হওয়ায় এখানেই মামলাটি চূড়ান্ত হবে। বিষয়টি তদন্তাধীন।”
এই দুটি মামলার মধ্যে স্থান, সময়, নিহতের সম্পর্ক, এমনকি দাফনের সময় ও অবস্থান নিয়েও রয়েছে অসঙ্গতি। তদুপরি, একজনের স্বাক্ষর দেওয়া আরেকজনের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের, মৃত দেখিয়ে জীবিত বাবা-মাকে এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা—সব মিলিয়ে বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও জটিল হয়ে উঠছে।
এই বিষয়ে দ্বিতীয় মামলার বাদী নিহতের পিতা মো. হানিফ-এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সাধারণত, কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একাধিক থানায় পৃথকভাবে মামলা দায়ের হলে সেটি আইনি জটিলতায় পড়ে। আইন অনুযায়ী, যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেই থানাই মামলা গ্রহণ ও তদন্তের এখতিয়ার রাখে।
নারায়ণগঞ্জে নিহত মাদ্রাসা ছাত্র ইব্রাহিমের মৃত্যু এখন শুধুই একটি মর্মান্তিক ঘটনা নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক ও আইনি জটিলতার প্রতীক। প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তই পারে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য ও দায়ীদের সামনে আনতে।