বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ লাখ শিশু কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত, যার মধ্যে প্রায় ১০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই আইনে পরিবর্তন এনে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো এবং শিশুশ্রমের সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বুধবার (১৮ জুন) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। আগামীকাল ১৯ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমান শ্রম আইন অনুযায়ী, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজ করানো হলে সেটিকে শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এতদিন যে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল, তা এখন সময়োপযোগী নয়, তাই কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, কোনো শিশু স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সঙ্গে হালকা কাজেও অংশ নেয়। এসব ক্ষেত্রে বর্তমান সংজ্ঞা বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। তাই সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে যাতে করে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আমাদের সমাজের বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়।”
সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমসহ সকল ধরনের শিশুশ্রম চিরতরে বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন ১৩৮ ও ১৮২ অনুসমর্থন করেছে।
শ্রম উপদেষ্টা আরও বলেন, “কোনো শিশুকে বাধ্য করে কাজ করানো হবে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে যদি কোনো শিশু স্বেচ্ছায়, স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে কিছু সময় কাজে যুক্ত হয়— সেটা ভিন্নভাবে বিবেচনা করা হবে।”
আইএলও ও ইউনিসেফের যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমে যুক্ত, যাদের মধ্যে ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছে।
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত শিশুর হার ছিল ৩.২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কিছুটা কমে ২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে সামগ্রিকভাবে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের শ্রমে অংশগ্রহণের হার ৮.৭ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ৮.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিকর শ্রমে যুক্ত শিশুর হারও ৪.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪.৪ শতাংশ।
ইউনিসেফ বলছে, শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বাংলাদেশ এখনও কাঙ্ক্ষিত গতিতে শিশুশ্রম নির্মূলে এগোচ্ছে না। বিশেষ করে, অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শিশুরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সরকারি ছুটির কারণে ১২ জুনের পরিবর্তে ১৯ জুন দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দিবসটির প্রতিপাদ্য:“স্বপ্নের ডানায় উড়ি, শিশুশ্রমমুক্ত সমাজ গড়ি— অটুট মনোবলে আগাই, আলোর পথে এগিয়ে চলি।”