১৯ জুলাই ২০২৪ এ নারায়ণগঞ্জ শহরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সহিংস ঘটনার আলোকে ফের আলোচনায় এসেছে এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা শামীম ওসমানের নাম। ঘটনাটি ঘটেছিল প্রায় এক বছর আগে, তবে সম্প্রতি সেই হামলার কিছু দৃশ্য নতুনভাবে সামনে এসেছে যা রীতিমতো বিস্ময় তৈরি করেছে।
প্রকাশিত আলোকচিত্রগুলো ধারণ করেছিলেন সাহসী চিত্রগ্রাহক পারভেজ আসিফ আহমেদ । এই ছবি ও ঘটনার বিবরণ প্রথম প্রকাশ করেন প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি, যিনি সম্প্রতি নিজের সামাজিক মাধ্যমে কিছু চিত্রসহ একটি বিস্তারিত পোস্ট দেন।
সেই বিবরণ অনুযায়ী, ১৯ জুলাই শামীম ওসমান ও তার ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র হামলা সংঘটিত হয়। এ হামলায় অংশ নেয় তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা—অয়ন ওসমান, তানভীর আহমেদ টিটু, খোকন সাহা, এসএম রানা, শাহ নিজাম, সালাউদ্দিন বিটু এবং কাওসার আহমেদ। তারা দেশীয় ও বিদেশি অস্ত্র নিয়ে জনসাধারণ ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় বলে দাবি করা হয়েছে।
চাষাড়া মোড়, কালীরবাজার ও আশেপাশের এলাকায় সেদিন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফাঁকা গুলি, অস্ত্রের ঝনঝনানি আর চিৎকারে শহরের জনজীবন একেবারে থমকে যায়। জনতা নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন, আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন।
ছবিতে দেখা যায়, অস্ত্র হাতে কিছু ব্যক্তি রাস্তা জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে—কেউ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে, কেউ ধারালো অস্ত্র বা লাঠি হাতে। এমন চিত্র সেই দিনের সহিংসতার ভয়াবহতা এবং পূর্বপরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত বহন করে।
ছবিগুলোর মধ্যে এমন কিছু মুহূর্তও রয়েছে যেখানে দেখা যায় কিছু লোক গুলি চালানোর নির্দেশ দিচ্ছে । পারভেজ আসিফ যখন এসব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছিলেন, তখন তাকেও লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোকচিত্র ধারণ করতে সক্ষম হন।
নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। তবে বর্তমানে কিছুটা নিরাপদ অবস্থানে থেকে সাহসিকতার সঙ্গে তিনি ছবিগুলো জনসমক্ষে আনেন। ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক সমাজ এবং মানবাধিকার কর্মীরা এই সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানান।
এই ঘটনার পরপরই নাগরিক সমাজ থেকে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ওঠে। তারা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ৫ আগস্ট বর্তমান সরকারের পতনের পর শামীম ওসমান নাকি রাতের আঁধারে ছদ্মবেশে দেশ ত্যাগ করেন—এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এমনকি পরবর্তীতে তাকে প্রতিবেশী দেশে এক মাজারে কান্নারত অবস্থায় দেখা যায় বলে সামাজিক মাধ্যমে দাবি উঠেছে।