টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা একরামুল হককে র্যাবের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যা করার অভিযোগে কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা গ্রহণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রোববার ট্রাইব্যুনাল-১ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী সপ্তাহে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। একইসাথে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।
২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে র্যাব-৭ কর্তৃক “বন্দুকযুদ্ধে” নিহত হন একরামুল হক, যিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং দীর্ঘদিন যুবলীগের টেকনাফ শাখার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। র্যাব দাবি করে, একরামুল একজন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ঘটনাস্থল থেকে তারা ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও দুটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
তবে তার পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা একরামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা বলেন, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।
ঘটনার ঠিক একদিন আগে একরামুল তার স্ত্রী আয়েশা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। সেই কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়, যেখানে শোনা যায় তার স্ত্রী ও মেয়েদের আতঙ্কিত কণ্ঠ এবং মুহূর্ত পরে গুলির শব্দ ও আর্তনাদ। এই অডিও জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং “বন্দুকযুদ্ধ” ব্যাখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ঘটনার তিন বছর পর, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘ম্যাগনিটস্কি আইন’-এর আওতায় র্যাবের সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন র্যাব মহাপরিচালক ও পরবর্তীতে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা।
এই নিষেধাজ্ঞা ছিল বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রথম বড় ধরনের মানবাধিকার প্রতিক্রিয়া।
একরামুলের পরিবার দাবি করে, তারা রাষ্ট্রীয় সংস্থার হুমকির মুখে পড়েন এবং মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এরপরও স্ত্রী আয়েশা বেগম তাঁর স্বামীর জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আবেদন করেন।
সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন এবং ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে।