২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী শামীম ওসমানসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও, কিছু নেতা আত্মগোপনে থেকে বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। চেনা রূপে ফিরে এসে তারা গোগনগর ও আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা ও অরাজকতা শুরু করে।
পলাতক শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমানের নির্দেশে দেশে চোরা গুপ্ত হামলা ও সংঘাত সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে রাজনৈতিক চাপ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গোপনে চলছে আওয়ামী, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মিটিং — যার নেতৃত্বে রয়েছেন নূর হোসেন সওদাগর, কামাল হোসেন ও কাশেম সম্রাট।
নারায়ণগঞ্জের ‘গডফাদার’ খ্যাত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহ নিজামের নেতৃত্বে গড়ে উঠে গোগনগরের সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি। অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগেই শামীম ওসমান ও শাহ নিজামের আশীর্বাদে গোগনগরের সৈয়দপুরে নূর হোসেন সওদাগর, কামাল হোসেন, কাশেম সম্রাট ও রানা সহ একাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীর দল গড়ে ওঠে।
তারা চাঁদাবাজি, জমি দখল, সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা, কল কারখানা নিয়ন্ত্রণসহ ভয়াবহ অপরাধে লিপ্ত হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুরান সৈয়দপুরের আ/গ/ড়া পট্টির মৃত খোয়াজ মিয়া সওদাগরের ছেলে নূর হোসেন সওদাগর, ফকিরবাড়ির সুরুজ কয়ালের ছেলে কামাল হোসেন, চর সৈয়দপুরের দৌলত মেম্বারের ছেলে কাশেম সম্রাট এবং একই এলাকার রানা আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এদের মূল শক্তি ছিল — আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষকলীগের নাম ব্যবহার করে রাজনীতিকদের সুবিধাবাদী ব্যবহার। এছাড়া, ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় তারা নিরীহ মানুষের জমি ভুয়া দলিল বানিয়ে দখলে নেয়। কেউ প্রতিবাদ করলে বা আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন, হত্যা বা রক্তাক্ত হামলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কাঠপট্টি নদীর পূর্বে অবস্থিত সিকদার এন্টারপ্রাইজ রাইস মিলসের মালিক আবুল মাস্টার গত ৩০-৩৫ বছর ধরে ওই জায়গায় অবস্থান করছেন, তবে তার লিজ বা বৈধ দলিল নেই। ২০২০ সালে নূর হোসেন আরএস রেকর্ডীয় মালিকের কাছ থেকে জায়গাটি কিনেছেন বলে দাবি করে জোরপূর্বক দখলে নেন।
স্থানীয়দের মতে, নূর হোসেনের আসল ব্যবসা হলো ভূমিদস্যুতা — জাল দলিল তৈরি, মিথ্যা সনদ, জোরপূর্বক দখল, এসবই তার ও কামাল হোসেনের নিত্যদিনের কাজ। এদের পেছনে রয়েছে ওসমানীয় বলয়ের রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা, যারা একাধিক ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের মামলারও আসামি। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
গোগনগর ও সৈয়দপুরের সাধারণ মানুষ জানান, শুরুতেই প্রশাসন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার সুযোগ পায়।
তাদের বিশ্বাস, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানই ছিল একটি প্রতিবাদ — যেখানে ছাত্র ও জনতা তাদের প্রাণ দিয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার। যদি শুরু থেকেই অপরাধীদের দমন করা হতো, তাহলে দেশ এই পর্যায়ে নামতো না।
জনগণের দাবি, অপরাধীদের শাস্তির আওতায় এনে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হোক।