নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মারধরে নিহত মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় স্ত্রী সেলিনা বেগম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার (৩০ জুলাই) দিবাগত রাতে আড়াইহাজার থানায় মামলাটি করেন তিনি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন।
মামলায় মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য তোতা মিয়া প্রধান, তার দুই ছেলে—জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক খোকন প্রধান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য রাসেল প্রধান, তোতার ভাই বেনু প্রধান, ভাতিজা আলম প্রধান, সাদ্দাম হোসেনসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ওসি জানান, “ঘটনার পর থেকেই আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। তবে বৃহস্পতিবার রাত আটটা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।”
এদিকে বিএনপির ভেতর থেকে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে তোতা মিয়া প্রধান, খোকন প্রধান, রাসেল প্রধান, আলম প্রধান ও সাদ্দাম হোসেনকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
স্থানীয় সূত্র ও নিহতের পরিবারের দাবি, গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমদী বাজারের তিনটি দোকানঘর একত্র করে স্থানীয় বিএনপি একটি কার্যালয় স্থাপন করে। ওই তিনটি দোকানঘরের একটি ছিল জাহাঙ্গীর হোসেনের মালিকানাধীন। কিন্তু দলীয় কার্যালয় চালাতে গিয়ে কোনো ভাড়া না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি।
পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ভাড়া না পেয়ে দোকানঘরটি দখলে নিয়ে নিজেই মুদি দোকান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন জাহাঙ্গীর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সকালে মাহমুদপুর বাজারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত জাহাঙ্গীর নিজেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের মাহমুদপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নিহতের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, “আমার স্বামী নিজেই বিএনপির কর্মী ছিলেন। অথচ দলীয় নেতারাই তাকে হত্যা করল। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই—এদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।”
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে দলীয় কর্মীদের মধ্যেই এ ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনায়।