রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে চাঁদা আদায়ের সময় গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রনেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদের বাড্ডার বাসা থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভোরে বাড্ডা বৈকাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার একটি ভাড়া বাসা থেকে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এটি শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে নেওয়া ১০ লাখ টাকার একটি অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাকি অর্থ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজ্জাক ঢাকায় দুটি ভাড়া বাসা ব্যবহার করতেন—একটি পশ্চিম রাজাবাজারে এবং অন্যটি বাড্ডায়। বাড্ডার বাসায় তিনি নিয়মিত থাকতেন, আর রাজাবাজারে যেতেন মাঝে মাঝে। জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ বাড্ডার বাসায় অভিযান চালিয়ে টাকাগুলো উদ্ধার করে।
এর আগে, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) রাজ্জাকের আরেক বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক জব্দ করে। এসব চেক ইস্যু করা হয়েছিল রংপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ট্রেড জোন থেকে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, রাজ্জাকসহ মোট পাঁচজন ব্যক্তি ‘নিট জোন প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের নামে ১১টি চেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা আদায় করেছিলেন। তবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় কোনো চেকই ছাড়ানো যায়নি। পরে রাজ্জাকরা সাবেক এমপিকে হুমকি দিতে শুরু করেন।
গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় চাঁদা আদায়ের সময় গুলশানের বাড়িতে হাতেনাতে ধরা পড়েন রাজ্জাকসহ পাঁচজন। অন্য চারজন হলেন—ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর। বর্তমানে তারা সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, রাজ্জাক আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। পরে তিনি ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামে নতুন একটি সংগঠনে যুক্ত হন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই তিনি ও তার সহযোগীরা গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর চাঁদা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন।
ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, “চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক বা দলীয় পরিচয় মুখ্য নয়—অপরাধ করলেই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভুক্তভোগীরা আগে জানালে হয়তো এই অপরাধগুলো আগে রোধ করা যেত। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে যে, কোথায় দুর্বলতা ছিল।”
পুলিশ জানিয়েছে, রিয়াদের সহযোগীদের পরিচয় চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এদিকে আরও একটি নতুন মামলার প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাঁদাবাজির শিকারদের সামনে এসে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে।