নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির কমিটি ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে আইনজীবী সমিতি কুক্ষিগত করা ও লুটপাটের অভিযোগ তুলেছেন অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ গালিব। তিনি বলেন, “স্বৈরাচারিতার যে মাত্রা, সেটাও তিনি ছাড়িয়ে গেছেন।”
গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকালে ফতুল্লা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ও রবিবার (১০ আগস্ট) এক সাক্ষাৎকারে অ্যাডভোকেট গালিব বলেন—”আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য এবং বিএনপি-পন্থী আইনজীবী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে জেলা বারের পরিস্থিতি নিয়ে আমি সহ শত শত আইনজীবী অসন্তুষ্ট। প্রতিবছর আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। ১৯৭৩ সালে বার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গত বছর প্রথমবার বিনা ভোটে নির্বাচন হয়েছে। এটি বারের ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙেছে। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন এবং লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা সমিতি বা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের তহবিলে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে রেখেছেন।”
তিনি আরও বলেন—”আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছি। গতবার মনোনয়ন ও সিলেকশন বাণিজ্যের প্রতিবাদ করায়, আইনজীবী সমিতির দ্বিতীয় তলায় আমাকে, রেজা, মমিন ভাই, শেখ মহসিন, আফজাল, কামরুজ্জামানসহ আরও অনেককে জিম্মি ও লাঞ্ছিত করা হয়। রূপগঞ্জের অ্যাডভোকেট মমিন ভাইকে রক্তাক্ত করে জোরপূর্বক সিলেকশন মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। নির্যাতন ও মানসম্মানের কারণে বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়েছিল। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত তখন বলেছিলেন, এ ১৭ জন পরবর্তীতে আর নির্বাচন করবে না। কিন্তু ৭ আগস্টের সাধারণ সভায় তিনি বলেন, গতবার যারা নির্বাচন করেছে তারাই করবে।”
গালিব অভিযোগ করে বলেন—”সংবাদ সম্মেলন করা কি অপরাধ? ৭ আগস্ট মমিন ভাই ও আমি বারে গেলে আমাকে হুমকি দেওয়া হয় যে, সংবাদ সম্মেলন করায় কিভাবে নির্বাচন করি তা দেখে নেওয়া হবে। আমাদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজা ভাইয়ের ছোট ভাই মুকুলকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন—”সাখাওয়াত ভাই, আপনি কিন্তু নারায়ণগঞ্জের লোক নন, মুন্সিগঞ্জের লোক। এই জেলার কাদা আপনার গায়ে লাগেনি। আমরা আইনজীবীরা আপনাকে নেতা নির্বাচিত করেছি। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর আগের আদর্শের সাখাওয়াত এখন আর নেই। আপনি আইনজীবীদের রক্তাক্ত ও জখম করেন। ৭ আগস্টের সাধারণ সভায় গণমাধ্যম প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি—এমন বিধিনিষেধ কোথাও লেখা নেই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বার সভাপতি ও সেক্রেটারিকে আজ্ঞাবহ করে তিনি নিজে এজিএম পরিচালনা করেছেন। অতীতে কেউই এসব করেননি। সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় বারকে কুক্ষিগত করেছেন, যা সাধারণ আইনজীবীদের ওপর জুলুম ছাড়া কিছু নয়। গতবার ৬ জনকে মেরেছেন ৬০ হয়েছে। এবার ৬০ জনকে মারবেন ৬০০ জন হবে। —আমাদের ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না। সাধারণ সভায় আমাকে অ্যাড সাখাওয়াত বক্তব্য দিতে বাধা প্রদান করেন, তবে মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব টিপু ভাই সে সুযোগ করে দিয়েছেন।”
তিনি অভিযোগ করেন—”তাদের সততার ঘাটতি ছিল বলে গতবার নির্বাচন দেননি। আমরা এজিএমে বলেছিলাম, গতবারের মতো আউয়াল মার্কা কমিশনার যেন না থাকে। সাখাওয়াতের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনার ৫ জনের মধ্যে ৪ জনকে বাদ দেয়। কিন্তু আজিজুর রহমান মোল্লাকে বাদ দিতে বলা হলেও তাকে বাদ দেওয়া হয়নি। আজিজুর রহমান মোল্লা আওয়ামী সরকারের সময় স্বৈরাচার দোসর হয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের খিচুড়ি বিতরণসহ সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন, যার ছবি প্রমাণ হিসেবে আছে। অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধান বিএনপি ছেড়ে জেলা বিএনএফের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। শুধু তাই নয়, ক্ষমতা পালাবদলের পর অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত জেলা জজ সিপের খাস কামরায় গিয়ে বিচারক মহোদয়কে পেশিশক্তি প্রদর্শন করেছেন এবং আওয়ামী দোসরদের জামিন বাণিজ্য করেছেন—যা আদালত প্রাঙ্গণে সকলে অবগত।”
চ্যালেঞ্জ ছুড়ে গালিব বলেন—”যদি আমার কথা মিথ্যা হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। জেলা আইনজীবী সমিতিতে গণতন্ত্র ফিরে আসুক—আমরা সেটাই চাই।”
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “আইনজীবী সমিতিকে জিগাও আমি আইনজীবী সমিতির লুটপাট করার কিছু আছে। আমি কি আইনজীবী সমিতির কিছু? তাহলে! গালিব কি নমিনেশন পাওয়ার যোগ্য? না দিলেই নমিনেশন বাণিজ্য হয়ে যায়? যাদের দিয়েছি তারা আওয়ামী লীগ আমলে মামলা খেয়েছে, জেল খেটেছে—এনে নমিনেশন বাণিজ্যের কি আছে? নমিনেশন দেওয়ার দায়িত্ব কি আমার একার? যারা মামলা খেয়েছে তারা পেয়েছে। ফোন দিয়ে কি বক্তব্য দেওয়া যায়? সামনাসামনি এসে কথা বল।”