অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঘোষণা দিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন। তার দাবি, যেহেতু তিনি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা নৈতিকভাবে সঙ্গত নয়।
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত অনলাইন গণমাধ্যম ঠিকানা-এর আয়োজিত এক টকশোতে মঙ্গলবার তিনি এ ঘোষণা দেন। আসিফ মাহমুদ বলেন, “২০১৮ সাল থেকে আমি রাজনীতিতে আছি। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কারো উচিত নয় নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা। সেই কারণেই তফসিল ঘোষণার আগেই আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেব।”
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসিফ মাহমুদ তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গন্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেবেন কিনা বা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা, সেই প্রশ্নে সরাসরি উত্তর দেননি।
তিনি বলেন, এখনো কিছু অসমাপ্ত কাজ রয়েছে—এর মধ্যে বড় মাইলফলক হিসেবে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান সম্ভব হয়েছে, কিন্তু এখনো জুলাই সনদ প্রকাশ ও স্থানীয় সরকার সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন বাকি। “এই কাজগুলো শেষ না করলে ইতিহাসের কাছে দায় থেকে যাবে,” মন্তব্য করেন তিনি।
টকশোতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন, এক বছরের কার্যক্রম, রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা, জুলাই আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর মধ্যে বিভাজন, মুরাদনগরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং তার নিজস্ব রাজনৈতিক লক্ষ্যসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ৫ আগস্টের পর সামরিক বাহিনী ক্ষমতার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, একাধিক রাজনৈতিক শক্তি সক্রিয় রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব প্রভাব বলয় আছে। “একেকজন উপদেষ্টা একেক রাজনৈতিক পটভূমি থেকে এসেছেন, ফলে ক্ষমতার একক কোনো কেন্দ্র নেই,” তিনি যোগ করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, একটি প্রভাবশালী মহল জাতীয় পার্টিকে সামনে এনে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা দিতে চাইছে এবং আওয়ামী লীগের যেসব নেতার ভাবমূর্তি ভালো, তাদেরও জাপার হয়ে নির্বাচনে আনার প্রচেষ্টা চলছে।
কয়েক মাস আগে একটি ভিডিও বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রথমে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মানতে চাননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি টকশোতে ব্যাখ্যা দেন—“এটা সরকার গঠনের আগের ঘটনা। বঙ্গভবনে বৈঠকে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করা হলে সেনাপ্রধান আপত্তি তোলেন, কারণ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাকে পছন্দ করে না। পরে তিনি রাজি হলেও ‘বুকে পাথরচাপা দেওয়া’ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, যা ভিডিওতে কোট করা হয়।”
তিনি পরিষ্কার করে বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই, বরং ৫ আগস্টের পর এবং গণঅভ্যুত্থানের আগে সেনাবাহিনীর ভূমিকা তিনি স্বীকার করেন। মতবিরোধ ছিল শুধু আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হওয়ায় সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই, যার ফলে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। “এর দায় শুধু আমার নয়, আমাদের সরকারের ইচ্ছা থাকলেও নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। সব দল রাজি থাকলেও বিএনপি ও তাদের কয়েকটি সহযোগী দল এতে অংশ নিচ্ছে না,” বলেন আসিফ মাহমুদ।
তিনি আরও দাবি করেন, পতাকা গাড়ির মোহ বা ক্ষমতার স্বাদ নেওয়ার জন্য নয়, বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তিনি সরকারে রয়েছেন।