আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে আদালতপাড়ায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের প্রার্থীরা।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশায় বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে প্যানেলের প্রার্থীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সিনিয়র আইনজীবী মো. আব্দুল বারী ভূঁইয়ার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
পরে বিকেলে প্যানেলের পক্ষ থেকে সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করীম খান রেজা এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ গালিব এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেন।
সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করীম খান রেজা বলেন,“২০২৫-২০২৬ সালের আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আগামী ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। গত কয়েক বছর ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। বিগত বছরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একতরফাভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেটাকে আসলে নির্বাচন বলা যায় না। তখন আমি সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলাম, কিন্তু আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রতিপক্ষ প্যানেলের লোকজন মনোনয়নপত্র দিতেই দেয়নি। এমনকি সে সময়ের নির্বাচন কমিশনারও স্বীকার করেছিলেন যে আমাদের আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। সময় পার হয়ে যাওয়ায় আমি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারিনি, ফলে নির্বাচনের পরিবর্তে সিলেকশন হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঘোষণা দিয়েছিল ফোরামের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। কিন্তু এডহক কমিটির অ্যাডভোকেট জাকির নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা দেন। আমরা তখন সরে দাঁড়াই, কারণ এডহক কমিটির দায়িত্বে থেকে প্রার্থী হওয়া অনৈতিক।”
তিনি আরও বলেন,“আমরা প্যানেল ঘোষণার পর থেকেই নানাভাবে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আমাদের দল ও ফোরাম থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। যেহেতু প্যানেলের সবাই বিএনপি-সমর্থিত, তাই এই ভয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বহিষ্কারের নিয়ম কী, সেটা তারাও জানে না। উপরন্তু বর্তমানে কোনো এডহক কমিটি নেই। নির্বাচন কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে কোনো কারসাজি হবে না। তবে ভেতরে না হলেও বাইরে হামলার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, পরিস্থিতি তত স্পষ্ট হবে।
আমার বিশ্বাস, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আসল শক্তি হলো ভোটাররা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বলেছিলেন—দলের চেয়ে দেশ বড়, দেশের চেয়ে জনগণ বড়। ভোটাররাই সকল ক্ষমতার মালিক, আর বিজ্ঞ আইনজীবীরাই আমাদের শক্তি। আচরণবিধি মেনে আমরা ভোটারদের কাছে ভোট চাইব।”
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ গালিব বলেন,“আমরা কোনো ব্যক্তি বা নেতার বিরুদ্ধে নই। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং নারায়ণগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য—বারের নির্বাচনকে একটি বন্ধনে রূপান্তরিত করা, যাতে সুষ্ঠু ও উন্মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন হয়। অতীতের কলঙ্কিত, অবৈধ, বিনা ভোটের নির্বাচনগুলো যেন এ নির্বাচনের মাধ্যমে মুছে যায়।”
তিনি আরও বলেন,“গত বছর থেকেই আমরা আশঙ্কায় আছি। প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, এমনকি ফোরাম ও বিএনপি থেকে বহিষ্কারের ভয় দেখানো হচ্ছে। আসলে আমরা কি বিএনপির বাইরে কেউ? আমাদের নির্বাচন বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, বরং বিএনএফের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষ নির্বাচনটিকে বিএনপির বিরুদ্ধে হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা করছে।
আমাদের প্রত্যাশা—যদি ভোটারদের ওপর বলপ্রয়োগ না হয়, তাহলে আমাদের পুরো প্যানেল বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। ইতোমধ্যে আমরা সবার সমর্থনও পাচ্ছি।”