পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দলগুলোর কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ভারতে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন এবং নিরাপদ আশ্রয় তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি গোপনীয় সামরিক নথিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
গোপন নথিতে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল জেএসএস (শান্তি) ও সংস্কারপন্থী নেতাদের পাশাপাশি ইউপিডিএফ (প্রসিত) নেতারাও ভারতে জমি কিনেছেন।
জেএসএস (শান্তি) সভাপতি শান্তি লারমা কলকাতায় ১ কানি জমি কিনেছেন।
দলের সহসভাপতি উষাতন তালুকদার আগরতলায় ২ কানি জমি ক্রয় করেছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা আগরতলার অভয়নগরে ২ কানি জমির মালিক হয়েছেন।
অন্যান্য নেতাদের মধ্যে গ্যানান্দু বিকাশ চাকমা, সঞ্জীব চাকমা, বিশাল চাকমা, অংশুমান চাকমা, বিমল কান্তি চাকমা এবং জুপিটার চাকমার নামও রয়েছে।
এদের মধ্যে অনেকে একাধিক জায়গায় জমি কিনেছেন, এমনকি রাবার বাগান পর্যন্ত ক্রয় করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নথি অনুযায়ী, গত ১ আগস্ট ২০২১ তারিখে জেএসএস (শান্তি) নেতারা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র’ (RAW)–এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আধিপত্য বজায় রাখতে অস্ত্র ও গোলাবারুদের সহায়তা চাওয়া হয়।
এছাড়া ৪ জুন ২০২১ তারিখে শক্তিপদ ত্রিপুরা ও বাচু চাকমা ত্রিপুরা পুলিশের আইজির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে জেএসএস নেতাদের ভারতে আশ্রয় দেওয়া, ত্রিপুরা ও মিজোরামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু করা এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।
১৪ জুন একই ধরনের আরেকটি বৈঠকে ত্রিপুরা পুলিশের ডিজিকে নগদ ৫ লাখ রুপি দেওয়া হয় বলেও নথিতে উল্লেখ আছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে মতামত হিসেবে বলা হয়েছে—
ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এমন বৈঠক দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
ভারতীয় ভূখণ্ডে ক্যাম্প চালানো থেকে স্পষ্ট, উপজাতীয় নেতাদের স্বাধীন “জুম্মাল্যান্ড” প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখনও জীবিত।
জেএসএস (শান্তি) ও ইউপিডিএফ (প্রসিত)–এর মধ্যে সমন্বয় তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।
নথিতে সুপারিশ করা হয়েছে যে বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনা উচিত এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।