শারদীয় দুর্গোৎসবের পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ঢাকের বেজে ওঠা ধ্বনি স্তিমিত হলেও শহরময় ভেসে বেড়িয়েছে বিদায় ও আনন্দের মিশ্র আবেগ। সকাল থেকে রাত গভীর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের পূজামণ্ডপগুলোতে চলেছে এই মিলনমেলা।
সকালে পূজা-অর্চনা শেষে নারীরা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। মণ্ডপজুড়ে আরতি, উলুধ্বনি, ঢাকের তালে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। বিবাহিতা নারীরা দেবীর চরণে সিঁদুর ও মিষ্টি নিবেদন করেন এবং একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সংসারের মঙ্গল কামনা করেন। দেবীকে বিদায় জানানোর আগে ফুল, সিঁদুর, শঙ্খ ও অলঙ্কারে প্রতিমাকে সাজানো হয়।
বিকেলের পর থেকে শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। ভক্তরা ঢাকঢোল, বাঁশি, গান ও নাচের তালে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। ট্রাক ও ভ্যানে প্রতিমা নিয়ে এসব শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন ঘাটে পৌঁছায়।
সন্ধ্যার পর থেকেই শীতলক্ষ্যা নদীর বিভিন্ন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। প্রথমে নগরীর ৩নং ঘাটে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পরে একে একে জেলার ২২৪টি মণ্ডপের প্রতিমা নদীর জলে বিসর্জন দেওয়া হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই আনুষ্ঠানিকতা। বিসর্জন ঘাটে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। বিসর্জন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ।
বিসর্জন ঘাট পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন—
“এবারের দুর্গোৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা চাই এই ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ বছর ৫ নম্বর ঘাটটি বড় করা হয়েছে, যাতে নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করা যায়।”
এ বছর নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট ২২৪টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সুন্দরভাবে পূজা উদযাপনের সুযোগ পাওয়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং শান্তিপূর্ণ উদযাপনে প্রশাসনের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানান।