ঝিনাইদহের মহেশপুরে চরম অভাব আর দেনার দায়ে সদ্যপ্রসূত ছেলে সন্তানকে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন এক নারী। তবে পুলিশের তৎপরতায় অবশেষে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ওই নারী চার মাসের গর্ভাবস্থায় স্বামীকে হারান হৃদরোগে। এরপর থেকে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। বাবার বাড়ি কিংবা শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই না পেয়ে শেষমেশ বৃদ্ধা নানির বাড়িতে আশ্রয় নেন। নিত্যদিনের খরচ চালাতে গিয়ে দেনার বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েন তিনি।
গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মহেশপুরের পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় সন্তানকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিনিময়ে হাসপাতালের খরচ মওকুফ করা হয় এবং নগদ ৬৫ হাজার টাকা হাতে পান তিনি।
ওই নারী জানান, “স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে কোথাও ঠাঁই পাইনি। নানির বাড়িতে থেকে ধার দেনায় দিন কাটিয়েছি। সন্তান মানুষ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে নবজাতককে দত্তক দিয়েছি।”
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হেলেনা আক্তার নিপার নেতৃত্বে পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে হাসপাতালের কাগজপত্রে ত্রুটি ও পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর পাওয়ায় মালিক সেলিম রেজা বাবুকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হাসপাতালের নার্স ইসমত আরাকে আটক করেছে পুলিশ, তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পুলিশ নবজাতক উদ্ধারে নামে। মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে অবস্থান শনাক্তের পর শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ভোরে মহেশপুর থানার এসআই আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে মা ও সন্তান মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসক ডা. সুজায়েত জানান, দুজনেই সুস্থ আছেন।