আনন্দঘন পরিবেশে শঙ্খ, ঘণ্টা ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে আজ মঙ্গলবার শহরের মিশনপাড়া এলাকায় রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে হিন্দু ধর্মের অন্যতম আকর্ষণীয় আচার কুমারী পূজা। দেবীরূপে আট বছরের এক কন্যাকে অর্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
কুমারীর আসনে রাজশ্রী ভট্টাচার্য্য
সকালে পূজারী ব্রহ্মচারী ঈশ্বর চৈতন্যের পরিচালনায় কুমারীর আসনে বসেন নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ আখড়া এলাকার পাপ্পু ভট্টাচার্য্য ও স্বর্ণা ভট্টাচার্য্যের মেয়ে রাজশ্রী ভট্টাচার্য্য। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের ছাত্রী এবং মোদগুল্লো গোত্রের।
দেবীরূপে রাজশ্রীকে মণ্ডপে তুলে আনা হলে ষোড়শ উপাচার (ষোলটি ঐতিহ্যবাহী উপাচার্য) অনুসারে পূজা করা হয়। ঢাক-ঢোলের বাজনা, মন্ত্রপাঠ ও অঞ্জলির মাধ্যমে ভক্তরা দেবী দূর্গাকে বরণ করেন। শেষে প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
পূজা উপলক্ষে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার ভক্ত পূজামণ্ডপে জড়ো হন। কুমারীর আশীর্বাদ গ্রহণের জন্য ভক্তদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। পূজার আবহে মিশনপাড়া এলাকা উৎসবে মুখরিত হয়ে ওঠে।
হিন্দু ধর্ম মতে, কুমারী হলো শুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক। দেবী দুর্গার আরেক নাম কুমারী। বিশ্বাস করা হয়, কুমারী পূজার মাধ্যমে স্বয়ং মা দুর্গা মানুষের ভেতরে বিকশিত হন এবং ভক্তদের জীবনে কল্যাণ ও শান্তি আনয়ন করেন। এবারের পূজায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।
কুমারী রাজশ্রীর বাবা পাপ্পু ভট্টাচার্য্য বলেন, “আমার মেয়েকে কুমারী রূপে বসাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আজ আমি দেশবাসীসহ সবার মঙ্গল কামনা করেছি।”
রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী একনাথানন্দ পূজা শেষে বলেন, “শাস্ত্রমতে প্রতিটি মেয়ের মধ্যেই দেবী দুর্গা বিরাজমান। সেই বিশ্বাস থেকেই কুমারী পূজা করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, মেয়েদের মধ্যে ভগবানকে দেখার চেষ্টা করো। যে পরিবার, সমাজ বা দেশে মেয়েরা শান্তিতে নেই, সেই পরিবার, সমাজ বা দেশও শান্তিতে থাকতে পারে না। এজন্য নারীদের সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে।”
নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনের কুমারী পূজা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার এক অনন্য উৎসব হয়ে উঠেছে। ভক্তদের মতে, এ আয়োজন আগামী দিনগুলোতেও শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।